মরিচের বিভিন্ন রোগের লক্ষণ, ব্যবস্থাপনা, সাবধানতা ও করণীয় প্রতিকার ব্যবস্থা


মরিচের বিভিন্ন রোগের লক্ষণ, ব্যবস্থাপনা, সাবধানতা ও করণীয় প্রতিকার ব্যবস্থা

  • রোগের নামঃ

  • মরিচের ক্ষত (এ্যানথ্রাকনোজ) রোগ

লক্ষণঃ
এ রোগে আক্রান্ত পাতা, কান্ড ও ফলে বাদামী কলো দাগ দেখা যায় । পরে দাগগুলো বড় হয় এবং মরিচ পচে যায়।


ব্যবস্থাপনাঃ
* আক্রান্ত পরিত্যক্ত অংশ সংগ্রহ করে নষ্ট করা । 
* রোগ দেখা দিলে প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মিলি টিল্ট ২৫০ ইসি ১০-১২ দিন অন্তর ২ বার স্প্রে করা ।


সাবধানতাঃ
স্প্রে করার পর ১৫ দিনের মধ্যে সেই মরিচ খাবেন না বা বিক্রি করবেন না


করনীয়ঃ
১. সুস্থ গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করা। 
২. সুষম সার ব্যবহার করা । 
৩. প্রোভেক্স বা হোমাই বা বেনলেট ১% দ্বারা বীজ শোধন করা।




রোগের নামঃ
মরিচের ফুল ঝরে পড়া


লক্ষণঃ
বোরন সারের ঘাটতির কারণে এরকম হতে পারে ।


ব্যবস্থাপনাঃ
শতাংশ প্রতি ১০ গ্রাম বোরন সার প্রয়োগ করা ।


সাবধানতাঃ


করনীয়ঃ
১। মাটি পরীক্ষা করে সার দেয়া। 
২। সুষম সার ব্যবহার করা।


রোগের নামঃ
মরিচের কান্ড পঁচা রোগ


লক্ষণঃ
এ রোগে আক্রান্ত হলে মাটির কাছাকাছি কলো দাগ দেখা যায়। পরে দাগগুলো বড় হয় এবং কান্ড পঁচে যায় ।


ব্যবস্থাপনাঃ
১। আক্রান্ত পরিত্যক্ত অংশ সংগ্রহ করে নষ্ট করা। 
২। রোগ দেখা দিলে প্রতি লিটার পানিতে কার্বেন্ডজিম গ্রুপের ছত্রাকনাশক যেমন: ব্যাভিস্টিন বা নোইন ১গ্রাম/ লিটার হারে মিশিয়ে ১০-১২ দিন অন্তর ২ বার স্প্রে করা।

সাবধানতাঃ
স্প্রে করার পর ১৫ দিনের মধ্যে সেই মরিচ খাবেন না বা বিক্রি করবেন না ।


করনীয়ঃ
১। সুস্থ গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ বেনলেম
২। সুষম সার ব্যবহার করা। 
৩। প্রোভেক্স বা হোমাই বা বেনলেট ১% দ্বারা বীজ শোধন করা ।




রোগের নামঃ
মরিচের ভাইরাসজনিত রোগ

লক্ষণঃ
এ রোগ হলে গাছের পাতা কুচকে যায় এবং পাতায় হলুদ-সবুজের মোজাইকের মত দেখা যায় ।

ব্যবস্থাপনাঃ
১। ক্ষেত থেকে আক্রান্ত গাছ তুলে ফেলা । 
২। ভাইরাসমুক্ত বীজ বা চারা ব্যবহার করা । ৩। জাপ পোকা ও সাদা মাছি এ রোগের বাহক, তাই এদের দমনের জন্য ইমিডাক্লোরোপ্রিড ১ মি.লি. / লি. হারে পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করা।

সাবধানতাঃ
স্প্রে করার পর ১৫ দিনের মধ্যে সেই মরিচ খাবেন না বা বিক্রি করবেন না ।

করনীয়ঃ
১। সুস্থ গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করা। 
২। সুষম সার ব্যবহার করা ।


রোগের নামঃ
মরিচের ব্লাইট রোগ

লক্ষণঃ
এ রোগে আক্রান্ত মূলে, কান্ড ও পাতায় আক্রমণ দেখা যায় । কান্ড কাল রং ধারন করে শুকিয়ে যায় । ধীরে ধীরে গাছ মরে যায় ।

ব্যবস্থাপনাঃ
১।জমিতে পানি নিষ্কাসনের ব্যবস্থা করা । 
২।রোগ দেখা দিলে প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মিলি টিল্ট ২৫০ ইসি ১০-১২ দিন অন্তর ২ বার স্প্রে করা ।

সাবধানতাঃ
স্প্রে করার পর ১৫ দিনের মধ্যে সেই মরিচ খাবেন না বা বিক্রি করবেন না ।

করনীয়ঃ
১। সুস্থ গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করা। 
২। সুষম সার ব্যবহার করা। 
৩। উচু বেড তৈরি করে মরিচ চাষ করা।



রোগের নামঃ
মরিচের ক্যাংকার রোগ

লক্ষণঃ
এ রোগে আক্রান্ত পাতায় নিচের দিকে প্রথমে ছোট ছোট পানিভেজা দাগ দেখা যায় আস্তে আস্তে দাগগুলো বড় হয় এবং কান্ডে ক্যাংকারের ক্ষত দেখা যায়।

ব্যবস্থাপনাঃ
১. রোগ দেখা দিলে প্রাধমিক পর্যায়ে আক্রান্ত গাছ অপসারণ করা । 
২. পানি নিষ্কাশনের ভাল ব্যবস্থা করা। 
৩. নাইট্রেজেন সার ভাগ ভাগ করে কয়েকবারে প্রয়োগ করা ।

সাবধানতাঃ
জমিতে নাইট্রেজেন সার একবারে প্রয়োগ করবেন না ।

করনীয়ঃ
১. সুস্থ গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করা। 
২. সুষম সার ব্যবহার করা। 
৩. প্রোভেক্স বা হোমাই বা বেনলেট ১% দ্বারা বীজ শোধন করা।


রোগের নামঃ
মরিচের হোয়াইট মোল্ড রোগ

লক্ষণঃ
ছত্রাকের আক্রমণে এ রোগ হয়। এতে পাতার বোটায়, কান্ডে ও ফলে সাদা তুলার মত বস্তু দেখা এবং আক্রান্ত অংশ এমনকি পুরো গাছ মারা যায় ।

ব্যবস্থাপনাঃ
১. উপরি সেচের পরিবর্তে প্লাবন সেচ দেয়া। 
২. প্রাথমিক অবস্থায় আক্রান্ত ফল,পাতা ও ডগা অপসারণ করা। 
৩. বীজ লাগানোর আগে গভীরভাবে চাষ দিয়ে জমি তৈরী করা । 
৪. প্রপিকোনাজলগ্রুপের ছত্রাকনাশক যেমন: টিল্ট ২৫০ ইসি ০.৫ মি.লি. / লি. হারে পানিতে মিশিয়ে ১০ দিন পরপর ৩ বার শেষ বিকেলে স্প্রে করা।

সাবধানতাঃ
স্প্রে করার পর ১৫ দিনের মধ্যে সেই মরিচ খাবেন না বা বিক্রি করবেন না ।

করনীয়ঃ
১. সুস্থ গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করা 
২. সুষম সার ব্যবহার করা 
৩. প্রোভেক্স বা হোমাই বা বেনলেট ১% দ্বারা বীজ শোধন করা।


রোগের নামঃ
মরিচের আলফা মোজাইক রোগ

লক্ষণঃ
এ রোগ হলে গাছের পাতা সাদাটে হয়ে যায় এবং পাতায় সাদাটে হলুদ-সবুজের মোজাইকের মত ছোপ ছোপ দেখা যায় ।

ব্যবস্থাপনাঃ
১. ক্ষেত থেকে আক্রান্ত গাছ তুলে ফেলা 
২. ভাইরাসমুক্ত বীজ বা চারা ব্যবহার করা 
৩. জাপ পোকা ও সাদা মাছি এ রোগের বাহক, তাই এদের দমনের জন্য ইমিডাক্লোরোপ্রিড ১ মি.লি. / লি. হারে পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করা।

সাবধানতাঃ
স্প্রে করার পর ১৫ দিনের মধ্যে সেই মরিচ খাবেন না বা বিক্রি করবেন না ।

করনীয়ঃ
১. সুস্থ গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করা। 
২. সুষম সার ব্যবহার করা।


রোগের নামঃ
মরিচের ঢলেপড়া রোগ

লক্ষণঃ
এ রোগ হলে গাছের পাতা হলদে হয়ে শুকিয়ে যায়, ধীরে ধীরে গাছ ঢলে পড়ে এবং মারা যায়।

ব্যবস্থাপনাঃ
১। আক্রান্ত গাছ তুলে ক্ষেত পরিষ্কার করা 
২। চ্যাম্পিয়ন ২ গ্রাম / লি. হারে পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করা।

সাবধানতাঃ
১। আক্রান্ত ক্ষেত থেকে বীজ সংগ্রহ করবেন না। 
২। একই জমিতে পর পর বার বার মরিচ চাষ করবেন না ।

করনীয়ঃ
১। চাষের পূর্বে জমিতে শতাংশ প্রতি ১ কেজি ডলোচুন প্রয়োগ করে জমি তৈরী করুন। 
২। প্রতি লিটার পানিতে ৪ গ্রাম ট্রাইকোডারমা ভিরিডি মিশিয়ে ১৫-২০ মিনিট ধরে চারা শোধন করে নিন।


রোগের নামঃ
মরিচের কোনিফেরা ব্লাইট রোগ

লক্ষণঃ
এ রোগে আক্রান্ত হলে প্রথমে পাতায় পানি ভেজা ক্ষত দেখা যায়। পরে পাতার আগা পুড়ে যায়, পাতা ঝরে যায় এবং কান্ড ও শাথা কাল রং ধারণ করে এবং গাছ মরে যায় ।

ব্যবস্থাপনাঃ
* গোড়াসহ আক্রান্ত গাছ সংগ্রহ করে নষ্ট করা । 
* রোগ দেখা দিলে প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মিলি টিল্ট ২৫০ ইসি ১০-১২ দিন অন্তর ২ বার স্প্রে করা ।

সাবধানতাঃ
১. স্প্রে করার পর ১৫ দিনের মধ্যে সেই মরিচ খাবেন না বা বিক্রি করবেন না। 
২. উপরি সেচ না দেয়া। 
৩. একই জমিতে বার বার মরিচ চাষ না করা।

করনীয়ঃ
১. সুস্থ গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করা। 
২. সুষম সার ব্যবহার করা। 
৩. প্রোভেক্স বা হোমাই বা বেনলেট ১% দ্বারা বীজ শোধন করা । 
৪. কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহারের আগে ও পরে জীনানুমুক্ত রাখা।


রোগের নামঃ
মরিচের ব্যাকটেরিয়াজনিত নরম পঁচা রোগ

লক্ষণঃ
এ রোগে আক্রান্ত গাছের পাতা হলদে হয়ে যায় এবং ফলে পানি ভেজা কালো দাগ দেখা যায় । পরে দাগগুলো বড় হয় এবং মরিচ পঁচে যায় ।

ব্যবস্থাপনাঃ
* আক্রান্ত গাছ পলিব্যাগে সংগ্রহ করে নষ্ট করা । 
* ক্ষেত আক্রান্ত হলে আগে সুস্থ অংশে আন্ত:পরিচর্যা করে পরে আক্রান্ত অংশে করা উচিৎ । 
* পরিচর্যার সময় যেন গাছ আঘাত না পায় তা নিশ্চিত করা ।

সাবধানতাঃ
একই জমিতে বার বার মরিচ আবাদ করবেন না।


করনীয়ঃ
১. সুস্থ গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করা 
২. সুষম সার ব্যবহার করা 
৩. সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইড ১% দ্বারা বীজ শোধন করা ।

রোগের নামঃ
মরিচের পাতার দাগ রোগ

লক্ষণঃ
এ রোগ হলে গাছের পাতায় বাদামি দাগ দেখা যায় যায়। দাগের কিনারা কালচে বা বাদামি এবং কেন্দ্র সাদাটে। আনেক দাগ মিলে বড় দাগ হয় এবং পাতা পঁচে যায়।

ব্যবস্থাপনাঃ
১. ক্ষেত থেকে আক্রান্ত গাছ তুলে ফেলা 
২. গাছের উপরে সেচ দেওয়ার পরিবর্তে গাছের গোড়ায় সেচ প্রয়োগ করা 
৩. কপার অক্সিক্লোরাইড জাতীয় ছত্রাক নাশক ১ মি.লি. / লি. হারে পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করা।

সাবধানতাঃ
বীজ তলায় আক্রান্ত চাড়া মূল জমিতে লাগাবেন না ।


করনীয়ঃ
১. সুস্থ গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করা। 
২. সুষম সার ব্যবহার করা।


রোগের নামঃ
মরিচের ফল বিকৃতি


লক্ষণঃ


ব্যবস্থাপনাঃ
১. ভাইরাসের বাহক জাবপোকা ও সাদামাছি দমন করা। 
২. শতাংশ প্রতি ১০ গ্রাম রোরন সার প্রয়োগ করা।


সাবধানতাঃ


করনীয়ঃ
১. সুস্থ গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করা। 
২. সুষম সার ব্যবহার করা।


রোগের নামঃ
মরিচের আগা মরা রোগ


লক্ষণঃ
এ রোগে আক্রান্ত হলে প্রথমে গাছ আগা থেকে মরা শুরু হয় এবং ক্রমশ তা নিচের দিকে অগ্রসর হয় এবং এক সময় পুরো গাছ মারা যায় ।


ব্যবস্থাপনাঃ
* আক্রান্ত অংশ সংগ্রহ করে নষ্ট করা । 
* রোগ দেখা দিলে প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মিলি টিল্ট ২৫০ ইসি ১০-১২ দিন অন্তর ২ বার স্প্রে করা ।


সাবধানতাঃ
স্প্রে করার পর ১৫ দিনের মধ্যে সেই মরিচ খাবেন না বা বিক্রি করবেন না ।


করনীয়ঃ
১. সুস্থ গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করা 
২. সুষম সার ব্যবহার করা 
৩. প্রোভেক্স বা হোমাই বা বেনলেট ১% দ্বারা বীজ শোধন করা ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)