ঢেঁড়শের বিভিন্ন রোগের লক্ষণ, ব্যবস্থাপনা, সাবধানতা ও করণীয় প্রতিকার ব্যবস্থা
ঢেড়শ বাংলাদেশের অন্যান্য উল্লেখযোগ্য সবজি ফসলের মধ্যে অন্যতম ফসল। ঢেঁড়শ (অন্য নাম ভেন্ডি) মালভেসি পরিবারের এক প্রকারের সপুষ্পক উদ্ভিদ। এটি তুলা, কোকো ও হিবিস্কাসের সাথে
সম্পর্কিত। ঢেঁড়শ গাছের কাঁচা ফলকে সবজি হিসাবে খাওয়া হয়। ঢেঁড়শের বৈজ্ঞানিক নাম Abelmoschus
esculentus; অথবা Hibiscus
esculentus L। এটি পৃথিবীর ক্রান্তীয় অঞ্চল জন্মে।
ঢেঁড়শ
গাছ একটি বর্ষজীবী উদ্ভিদ, যা ২ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। এর পাতা ১০-২০ সেমি দীর্ঘ এবং চওড়া। পাতায় ৫-৭টি অংশ থাকে। ফুল হয় ৪-৮ সেমি চওড়া, পাপড়ির রঙ সাদাটে হলুদ, ৫ টি পাপড়ি থাকে। প্রতিটি পাপড়ির কেন্দ্রে লাল বা গোলাপী বিন্দু থাকে। ঢেঁড়শ ফল ক্যাপসুল আকারের, প্রায় ১৮ সেমি দীর্ঘ, এবং এর ভেতরে অসংখ্য বীজ থাকে।
লক্ষণঃ
ভাইরাসের আক্রমণে এ রোগ হয়। এ রোগে পাতা হলুদ হয় এবং পাতারশিরা উপ শিরাগুলো স্পষ্ট হয় ও স্বচ্ছ হয় ।
ব্যবস্থাপনাঃ
১। দেথামাত্র আক্রান্ত গাছ তুলে মাটির নিচে পুতে ফেলা
২। বাহক পোকা দমনের জন্য প্রতি লিটার পানিতে ডায়মেথোয়েট ৪০ ইসি (রগর, টাফগর, সানগর, পারফেকথিয়ন) ১মিঃলিঃ এডমায়ার ১ মিঃলিঃ মেটাসিস্টক্স ১ মিঃলিঃ সবিক্রন ১মিঃলিঃ, এসাটাফ- ১.৫ গ্রাম মিশিয়ে স্প্রে করা যেতে পারে ।
সাবধানতাঃ
১। স্প্রে করার পর ১৫ দিনের মধ্যে সেই সবজি খাবেন না বা বিক্রি করবেন না।
২। আক্রান্ত ক্ষেত থেকে বীজ সংগ্রহ করবেন না।
করনীয়ঃ
১. আগাম বীজ বপন করা।
২. সুষম সার ব্যবহার করা।
৩. সহনশীল জাতের চারা রোপন করুন যেমন: বারি ঢেড়শ-১।
৪. রোগমুক্ত বীজ ব্যবহার করুন ।
রোগের নামঃ
ঢেঁড়শের সুটিমোল্ড রোগ
লক্ষণঃ
এ রোগের আক্রমনে পাতায়, ফলে ও কান্ডে কাল ময়লা জমে। মিলিবাগ বা সাদা মাছির আক্রমন এ রোগ বিস্তারে সহায়তা করে।
ব্যবস্থাপনাঃ
১। আক্রান্ত পাতা ও ডগা ছাটাই করে ধ্বংস করা।
২। টিল্ট ২৫০ ইসি ১০ লি. পানিতে ৫ মি.লি. মিশিয়ে ১৫ দিন পরপর ২ বার
স্প্রে করা।
সাবধানতাঃ
১। স্প্রে করার পর ১৫ দিনের মধ্যে সেই সবজি খাবেন না বা বিক্রি করবেন না।
২। আক্রান্ত গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করবেন না।
করনীয়ঃ
১। আগাম বীজ বপন করা।
২। সুষম সার ব্যবহার করা।
৩। রোগ প্রতিরোধী জাত যেমন: বারি জাতের ঢেড়শ চাষ করা।
রোগের নামঃ
ঢেঁড়শের পাতা মোড়ানো পোকা
লক্ষণঃ
কীড়া অবস্থায় পাতা মোড়ায় এবং সবুজ অংশ খায় । এটি সাধারণত কচি পাতাগুলো আক্রমণ করে থাকে
ব্যবস্থাপনাঃ
১। ক্ষেত পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা ।
২। আক্রন্ত পাতা সংগ্রহ করে ধ্বংস করা ।
৩। ক্ষেতে ডাল পুতে পাখি বসার ব্যবস্থা করা ( বিঘা প্রতি ৮-১০ টি)
৪। আক্রমণ বেশি হলে প্রতি লিটার পানিতে সুমিথিয়ন বা ফলিথিয়ন-২ মিঃলিঃ মিশিয়ে ভালভাবে স্প্রে করা।
রোগের নামঃ
ঢেঁড়শের পাউডারী মিলডিউ রোগ
লক্ষণঃ
পাতা ও গাছের গায়ে সাদা পাউডারের মত দাগ দেখা যায়, যা ধীরে ধীরে সমস্ত পাতায় ছড়িয়ে পড়ে । আক্রান্ত বেশী হলে পাতা হলুদ বা কালো হয়ে মারা যায় ।
ব্যবস্থাপনাঃ
১।সম্ভব হলে গাছের আক্রান্ত অংশ সংগ্রহ করে ধ্বংস করুন।
২। ক্ষেত পরিস্কার রাখুন এবং পানি নিস্কাষনের ভাল ব্যবস্থা রাখুন।
৩। (ম্যানকোজেব+মেটালোক্সিল) গ্রুপের ছত্রাকনাশক যেমন: রিডোমিল গোল্ড ২ গ্রাম/ লিটার হারে অথবা সালফার ছত্রাক নাশক যেমন কুমুলাস ৪ গ্রাম বা গেইভেট বা মনোভিট বা থিওভিট ২ গ্রাম অথবা কার্বেন্ডাজিম গ্রুপের ছত্রাক নাশ যেমন: গোল্ডাজিম ০.৫ মিলি. বা এমকোজিম বা কিউবি বা চ্যামপিয়ন ২ গ্রাম/ লিটার হারে পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করা ।
সাবধানতাঃ
১। স্প্রে করার পর ১৫ দিনের মধ্যে সেই সবজি খাবেন না বা বিক্রি করবেন না।
২। আক্রান্ত ক্ষেত থেকে বীজ সংগ্রহ করবেন না।
৩। এলোপাতারি বালাইনাশক ব্যবহার করে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের ক্ষতি করবেন না।
করনীয়ঃ
১। আগাম বীজ বপন করুন।
২। সুষম সার ব্যবহার করুন।
৩। রোগ প্রতিরোধী জাত যেমন: বারি উদ্ভাবিত/ অন্যান্য উন্নত জাতের চাষ করুন।
৪। বিকল্প পোষক যেমন: আগাছা পরিস্কার রাখুন।
রোগের নামঃ
ঢেঁড়শের গোড়া পচা রোগ
লক্ষণঃ
আক্রান্ত চারার গোড়ার চারদিকে দাগ দেখা যায় । শিকড় পচে যায়, চারা নেতিয়ে পড়ে গাছ মারা যায় । স্যাতস্যাতে মাটি ও মাটির উপরিভাগ শক্ত হলে রোগের প্রকোপ বাড়ে । রোগটি মাটিবাহিত বিধায় মাটি, আক্রান্ত চারা ও পানির মাধ্যমে বিস্তার লাভ করে ।
ব্যবস্থাপনাঃ
১। আক্রান্ত গাছ অপসারণ করা।
২। কার্বেন্ডাজিম গ্রুপের ছত্রাকনাশক যেমন: ব্যাভিস্টিন ২ গ্রাম /লিটার হারে পানিতে মিশিয়ে গোড়ার মাটিসহ ভিজিয়ে দেওয়া।
সাবধানতাঃ
১। স্প্রে করার পর ১৫ দিনের মধ্যে সেই সবজি খাবেন না বা বিক্রি করবেন না।
২। আক্রান্ত গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করবেন না ।
করনীয়ঃ
১। আগাম বীজ বপন করা।
২। সুষম সার ব্যবহার করা।
৩। রোগ প্রতিরোধী জাত যেমন: বারি জাতের ঢেঁড়শ চাষ করা।
রোগের নামঃ
ঢেঁড়শের পাতার দাগ
রোগ
লক্ষণঃ
এ রোগে আক্রান্ত পাতায় প্রথমে ছোট ছোট পানিভেজা দাগ দেখা যায়, আস্তে আস্তে দাগগুলো বড় হয় । অনেক দাগ একত্রিত হয়ে বড় দাগ তৈরি করে। দাগের কিনারা গাঢ় বাদামি এবং কেন্দ্র সাদাটে হয়। পাতা ঝড়ে যায় এবং গাছ মরেও যেতে পারে।
ব্যবস্থাপনাঃ
১। আকান্ত পাতা ও ডগা ছাটাই করে ধ্বংস করা।
২। এটি তেমন ফলনে প্রভাব ফেলে না তাই রাসায়নিক বালাই নাশক ব্যবহারের প্রয়োজন নেই। তবে অধিক আক্রমণের ক্ষেত্রে রিডোমিল গোল্ড এম জেড ৩ গ্রাম/ লি. হরে পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করলে ভাল ফল পাওয়া যেতে পারে।
সাবধানতাঃ
আক্রান্ত গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করবেন না।
করনীয়ঃ
১. আগাম বীজ বপন করা।
২. সুষম সার ব্যবহার করা।
৩. রোগ প্রতিরোধী জাত যেমন: বারি জাতের ঢেঁড়শ চাষ করা।
রোগের নামঃ
ঢেঁড়শের পাতা সুড়ঙ্গকারী পোকা
লক্ষণঃ
ক্ষুদ্র কীড়া পাতার দুইপাশের সবুজ অংশ খেয়ে ফেলে। তাই পাতার উপর আঁকা বাঁকা রেখার মত দাগ পড়ে এবং পাতা শুকিয়ে ঝড়ে যায়।
ব্যবস্থাপনাঃ
১। আক্রান্ত পাতা সংগ্রহ করে ধ্বংশ করা বা পুড়ে ফেলা।
২। আঠালো হলুদ ফাঁদ স্থাপন করা ।
৩। সাইপারমেথ্রিন গ্রুপের কীটনাশক ( যেমন: কট ১০ ইসি) ১ মি.লি. / লি. হারে পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করা।
সাবধানতাঃ
স্প্রে করার পর ১৫ দিনের মধ্যে সেই সবজি খাবেন না বা বিক্রি করবেন না ।
করনীয়ঃ
১. আগাম বীজ বপন করা।
২. সুষম সার ব্যবহার করা।
৩. সঠিক দুরত্বে চারা রোপন করা।
রোগের নামঃ
ঢেড়ঁশের আগাম ধ্বসা রোগ
লক্ষণঃ
বয়স্ক পাতায় রোগের লক্ষণ প্রথম দেখা যায় । আক্রান্ত পাতায় উপর কাল বা বাদামী রংয়ের বৃত্তাকার দাগ পড়ে।
ব্যবস্থাপনাঃ
পরিমিত ও সময়মত সুষম সার ও সেচ প্রয়োগ করা এবং পাতায় ২/১টি দাগ দেখার সাথে সাথে প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম আইপ্রোডিয়ন বা মেনকোজেব গ্রুপের ছত্রাকনাশক যেমন: রোভরাল বা ডাইথেন এম ৪৫ স্প্রে করা।
সাবধানতাঃ
১। আক্রান্ত ক্ষেত থেকে বীজ সংগ্রহ করবেন না।
২। একই জমিতে বার বার ঢেড়ঁশের চাষ করবেন না ।
করনীয়ঃ
১. সুস্থ, সবল ও রোগ সহনশীল জাত চাষ করা ।
২. প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম আইপ্রোডিয়ন বা মেনকোজেব গ্রুপের ছত্রাকনাশক যেমন: রোভরাল গ্রাম বা ডাইথেন এম ৪৫ মিশিয়ে বীজ শোধন করা।
৩. নিয়মিত ক্ষেত পরিদর্শন করুন।
৪. সুষম সার প্রয়োগ করুন ।
Download the Pages