বোরো ধানের মাঝারি আকারের জাতসমূহের একর প্রতি উৎপাদন খরচ (২০২৫-২৬ অর্থবছর অনুযায়ী)

বোরো ধান (মাঝারী চাল) এর একর প্রতি উৎপাদন খরচ (২০২৫-২৬)

বোরো ধান

বাংলাদেশে আউশ আমন ও বোরো ধান চাষাবাদের ক্ষেত্রে সেচ মৌসুমে আবাদ হয়ে থাকে বোরো ধান। অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে প্রায় জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত বোরো ধানের বীজতলা থেকে রোপন কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। কৃষক ভাইয়েরা মাথার ঘাম ঝড়িয়ে তাদের অনাবাদি জমিও এ মৌসুমে ব্যবহার উপযোগী করে তুলেন। তাই অনেক পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে রবি মৌসুমে বোরো ধানের আবাদ করে দেশে খাদ্য ঘাটতি পূরণে তারা দেশে অবদান রেখে চলেছেন যা বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না।

কৃষক ভাইদের লাভ-লোকসান ফসল উৎপাদন ও বিপণন এর মধ্যে নিহিত থাকে। যে ফসল উৎপাদন খরচ কম করে বেশি দামে বিক্রয় করতে পারেন কৃষক ভাইয়েরা সাধারণত সে ফসল চাষাবাদে আগ্রহী হয়ে উঠেন। বাংলাদেশে দানা ফসলের মধ্যে যেহেতু ধান অন্যতম ফসল। তাই ধানের মধ্য হতে বোরো ধানের মাঝারি আকারের ধান চাষাবাদে তুলনামূলক একটি উৎপাদন খরচ তুলে ধরার ব্যবস্থা করা হলো। তবে বীজের দাম, সারের মূল্য, শ্রমিক মূল্য রোপন খরচ, সেচ খরচ, রোগ ব্যবস্থাপনা, জমি কর্ষণ, মাড়াই-ঝাড়াই, জমি লিজ খরচ ও অন্যান্য আনুসঙ্গিক খরচ দেশের বিভিন্ন এলাকাভেদে যেমন ভিন্ন ভিন্ন, তেমনি ধানের বাজার মূল্যও এক নয়। সে প্রেক্ষিতে মিলার পর্যায়েও চাল উৎপাদন খরচ ও বিক্রয় মূল্য আলাদা আলাদা হওয়ায় তালিকায় উল্লিখিত তথ্যের তারতম্য হতে পারে। তাই কোন শত ভাগ নিশ্চিতভাবে বিবেচনা না করে উপাত্ত থেকে আনুমানিক ধারণা নিয়ে বোরো ধান চাষাবাদে অগ্রসর হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হলো। নতুন বোরো চাষী কৃষক ভাইদের জন্য এ তথ্য টি অনেক কাজে আসতে পারে বলে আমার ধারণা।

খড়ের মূল্য বিবেচনায় আনলে একটা বিষয় পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায়। তা হলো যে এলাকায় গরু বা গবাদি পশু বানিজ্যিকভাবে বেশি পালন করে থাকে সে এলাকায় খড়ের দাম বেশি পাওয়া যায়। তাই উপজাত হিসেবে খড়ের মূল্যও এলাকাভেদে ভিন্ন হতে পারে। তবে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) কর্তৃক উদ্ভাবিত কিছু জাতের ধান রয়েছে যেগুলোর ফলন অধিক এবং খড়ও বেশ লম্বা হয়। ছোট ছোট খড়ের মূল্য থেকে লম্বা খড়ের মূল্য বেশী হয়।

২০২৫-২৬ অর্থ বছরের বীজ, সারসহ কৃষির অন্যান্য উপকরণের মূল্য বিবেচনা করে নিম্ন সারণীতে বোরো ধানের উৎপাদন খরচ তুলে ধরা হলো।

বোরো ধান (মাঝারী চাল) এর একর প্রতি উৎপাদন খরচ (২০২৫-২৬)

ফসলের নামঃ বোরো ধান (মাঝারী চাল)

মৌসুমঃ

রবি (খন্দ-২)

ক্রমিক নং

উপকরণের নাম

একক

একর প্রতি (পরিমাণ)

একক মূল্য (টাকা)

একর প্রতি মূল্য/ব্যয় টাকা

১.০

বীজ

কেজি

15

90

1350.00

২.০

চারা উৎপাদন খরচ

-

-

-

-

২.১

বীজতলা প্রস্তুত ও ব্যবস্থাপনা (5 শতাংশ জমি)

শ্রমিক

4

600

2400.00

২.২

চারা উত্তোলন ও রোপন

শ্রমিক

15

600

9000.00

৩.০

সার

-

-

-

-

৩.১

ইউরিয়া

কেজি

100

27

2700.00

৩.২

টিএসপি/ডিএপি

কেজি

90

22

1980.00

৩.৩

এমওপি

কেজি

50

20

1000.00

৩.৪

গন্ধক সার/জিপসাম

কেজি

30

23

690.00

৩.৫

দস্তা/জিঙ্ক সালফেট

কেজি

4

240

960.00

৩.৬

বোরোন

কেজি

2

240

480.00

৩.৭

ম্যাগনেশিয়াম

কেজি

6

60

360.00

৩.৮

ডলো চুন

কেজি

0

0

0.00

৩.৯

জৈব সার/গোবর/কম্পোষ্ট সার

কেজি

100

10

1000.00

৩.১০

অন্যান্য সার

কেজি

0

0

0.00

সারের উপমোট

-

-

-

9170.00

৪.০

বালাই ব্যবস্থাপনা

-

-

-

-

৪.১

রোগ ব্যবস্থাপনা

থোক

-

-

3000.00

৪.২

পোকা ব্যবস্থাপনা

থোক

-

-

3000.00

৪.৩

আগাছা ব্যবস্থাপনা

থোক

-

-

1000.00

৫.০

শ্রমিক খরচ

-

-

-

-

৫.১

পারিবারিক শ্রম

জন দিবস

5

600

3000.00

৫.২

ভাড়াকৃত শ্রম (কর্তনসহ)

জন দিবস

30

600

18000.00

৫.৩

চুক্তিভিত্তিক শ্রমিক খরচ

টাকা

1

1000

1000.00

৬.০

জমি কর্ষণ (পাওয়ার টিলার)

থোক

-

-

4500.00

৭.০

পানি ব্যবস্থাপনা

থোক

-

-

7880.00

৮.০

মাড়াই খরচ

থোক

-

-

5000.00

৯.০

চলতি মুলধন

-

-

-

68300.00

১০.০

চলতি মুলধনের সুদ

15%

-

-

10245.00

১১.০

জমির ভাড়া/লিজ

একর

1 একর (রবি মৌসুমের জন্য বাৎসরিক ভাড়ার এক-তৃতীয়াংশ)

10000.00

১২.০

একর প্রতি মোট উৎপাদন ব্যয়

-

-

-

88545.00

১৩.০

উৎপাদনঃ

-

-

-

-

১৩.১

ধান (১৪% আদ্রতাসহ)

কেজি

2743

34

93262.00

১৩.২

খড়

থোক

0

0

8000.00

১৪.০

একর প্রতি নীট উৎপাদন ব্যয় (মোট ব্যয়-খড়ের মূল্য)

-

-

-

80545.00

১৫.০

কেজি প্রতি নীট উৎপাদন ব্যয়

-

-

-

29.36

১৫.১

পরিবহণ ও অন্যান্য ব্যয়

থোক

-

-

1000.00

১৫.২

একর প্রতি কৃষকের মুনাফা

টাকা

2743

4.27

11717.00

১৬.০

একর প্রতি কৃষক পর্যায়ে ধানের বিক্রয় মূল্য

টাকা

-

-

93262.00

১৭.০

কেজি প্রতি কৃষক পর্যায়ে ধানের বিক্রয় মূল্য

টাকা

-

-

34.00

১৮.০

কমিশন এজেন্ট এর বিপণন খরচ ও মুনাফা

টাকা

93262.00

2.50%

2331.55

১৯.০

কেজি প্রতি মিলার কর্তৃক ধানের ক্রয়মূল্য

টাকা

2743

34.85

95593.55

২০.০

মিলিং খরচ

মণ

68.575

50

3428.75

২১.০

একর প্রতি নীট ধান প্রক্রিয়াকরণ খরচ (১৬+১৮+২০) (মিলার পর্যায়)

টাকা

-

-

99022.30

২২.০

চালঃ

-

-

-

-

২২.১

ধান হতে উৎপাদিত চালের পরিমাণ (৬৬%)

টাকা

1810.38

60

108622.80

২৩.০

একর প্রতি উপজাতের পরিমাণ ও মূল্য

-

-

-

-

২৩.১

একর প্রতি ভাঙ্গা চাল/খুদের পরিমাণ ও মূল্য (৪%)

টাকা

109.72

30

3291.60

২৩.২

একর প্রতি তুষের পরিমাণ ও মূল্য (২০%)

টাকা

548.6

12

6583.20

২৩.৩

একর প্রতি কুড়ার পরিমাণ ও মূল্য (১০%)

টাকা

274.3

20

5486.00

২৪.০

উপজাত থেকে আয়

টাকা

-

-

15360.80

২৫.০

একর প্রতি চালের নীট উৎপাদন খরচ (২১-২৪) (মিলার পর্যায়)

টাকা

-

-

83661.50

২৬.০

কেজি প্রতি চালের উৎপাদন খরচ (মিলার পর্যায়)

টাকা

-

-

46.21

 

পরামর্শঃ

১। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি), জয়দেবপুর, গাজীপুর কর্তৃক উদ্ভাবিত ব্রি হাইব্রিড জাতের বোরো ধান রোপন করবেন।

২। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি), জয়দেবপুর, গাজীপুর কর্তৃক উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল (উফশী) জাতের বোরো ধান রোপন করবেন।

৩। অধিক ফলনশীল সঠিক জাত নির্বাচন করবেন।

৪। ভাল বীজের বৈশিষ্ঠ্য সম্পন্ন বীজ বাছাই করবেন।

৫। অঙ্কুরোদগম হার দেখে নিবেন।

৬। সঠিকভাবে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি অনুসরণ করে বীজতলা তৈরী করবেন।

৭। বীজতলার জমির পরিমাণ অনুযায়ী সঠিক মাত্রায় বীজহার নির্ধারণ করবেন।

৮। নির্ধারিত মাত্রার বীজ পানিতে ভিজিয়ে ভাসমান বীজ বাদ দিন এবং তলায় জমাকৃত বীজ বীজতলায় বপনের জন্য আলাদা করে নিবেন।

৯। বীজ শোধক দ্বারা বাছাইকৃত বীজ শোধন করে নিবেন।

১০। বীজের শতভাগ অঙ্কুর নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ভেজা বীজ কমপক্ষে ২ দিন থেকে ৩ দিন পাটের বস্তা বা এ জাতীয় কিছু দিয়ে ঢেকে রাবেন। শতভাগ অঙ্কুরের জন্য কোন কোন ক্ষেত্রে ২ থেকে ৫/৭ দিন ঢেকে রাখার প্রয়োজন হতে পারে।

১১। অঙ্কুরিত বীজ আধুনিক বীজতলার নালার মধ্য দিয়ে হেঁটে হেঁটে ডান হাত দ্বারা বীজতলার ভূ-উপরিভাগের খুব কাছাকাছি দূরত্বের উপর থেকে নির্ধারিত বীজতলার জমির সকল বেডে সমানভাবে ছিটিয়ে দিবেন।

১২। বীজতলা আন্ত:পরিচর্যার জন্য মাঝে মাঝে বীজতলা পরিদর্শন করবেন।

১৩। চারার বয়স ১৮-২৫ দিন/২০-২৫দিন/২০-৩০দিন হলে অবশ্যই বীজতলা থেকে চারা উত্তোলন করে মুল জমিতে রোপন করবেন।

১৪। চারা উত্তোলনের সময় খেয়াল রাখবেন যেন চারার শিকড় ছিড়ে না যায় এবং সুস্থ্-সবল চারা একটি করে রোপন করলেই কাঙ্খিত কুশি পাওয়া যাবে বলে অবশ্যই এ পরামর্শগুলো কৃষক ভাইয়েরা মেনে চলবেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)