চিনাবাদামে আক্রমণকারী ক্ষতিকর পোকার লক্ষণ, ব্যবস্থাপনা, সাবধানতা ও করণীয় প্রতিকার ব্যবস্থাপনা

চিনাবাদামে আক্রমণকারী ক্ষতিকর পোকার লক্ষণ, ব্যবস্থাপনা, সাবধানতা ও করণীয় প্রতিকার ব্যবস্থা

চীনাবাদাম (আরাচিস হাইপোগিয়া-Arachis hypogea) লেগাম গোত্রের একটি প্রজাতি যার উৎপত্তিস্থল দক্ষিণ আমেরিকা, মধ্য আমেরিকা এবং মেক্সিকো। আদি উৎস আমেরিকা হলেও বর্তমানে ভারতীয় উপমহাদেশ, চীন, জাপান, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, মধ্য - আফ্রিকা, মাদাগাস্কার সহ আরো অনেক উষ্ণমন্ডলীয় দেশে চীনাবাদামের ব্যাপক চাষাবাদ হচ্ছে। চীনাবাদাম হচ্ছে সয়াবিনের পর সর্বাপেক্ষা বেশি তেল প্রদায়ী ফসল। চীনাবাদামের গাছ একটি ঔষধী জাতীয় লতানো গুল্ম, যা ৩০ সেমি থেকে ৫০ সেমি (১ ফুট থেকে ১.৫ ফুট) দীর্ঘ হয়।

 

পোকার নামঃ চীনাবাদামের পাতামোড়ানো পোকা

চীনাবাদামের পাতামোড়ানো পোকার আক্রমণ

লক্ষণঃ

১। কীড়া অবস্থায় পাতা মোড়ায় এবং সবুজ অংশ খায়।

২। এটি সাধারণত কচি পাতাগুলোতে আক্রমণ করে থাকে।

ব্যবস্থাপনাঃ

১। ক্ষেত পরিস্কার পরচ্ছন্ন রাখা ।

২। আক্রান্ত পাতা সংগ্রহ করে ধ্বংস করা ।

৩। ক্ষেতে ডাল পুতে পাখি বসার ব্যবস্থা করা (বিঘা প্রতি ৮-১০ টি)।

৪। আক্রমণ বেশি হলে প্রতি লিটার পানিতে সুমিথিয়ন বা ফলিথিয়ন-২ মিঃলিঃ মিশিয়ে ভালভাবে স্প্রে করা ।


সাবধানতাঃ

১। ক্ষেতের আশ পাশ অপরিচ্ছন্ন রাখবেন না।


করনীয়ঃ

১। নিয়মিত মাঠ পরিদর্শন করে আক্রমণের শুরুতেই ব্যবস্থা নিন।

 

পোকার নামঃ চীনাবাদামের থ্রিপস


থ্রিপস পোকার আক্রমণ


লক্ষণঃ

১। এর আক্রমণে পাতা কুঁকড়ে যায়।

২। পোকা গাছের কচি পাতা ও ডগার রস শুষে খেয়ে গাছকে দুর্বল করে ফেলে।

ব্যবস্থাপনাঃ

১। গাছের আক্রান্ত অংশ অপসারণ করা।

২। প্রাথমিক অবস্থায় শুকনো ছাই প্রয়োগ করা।

৩। পরিস্কার পানি জোরে স্প্রে করা।  

৪। ক্ষেত পরিস্কার/পরিচ্ছন্ন রাখা ।

৫। হলুদ রঙের ফাঁদ ব্যবহার করা ।

৬। তামাকের গুড়া (১০ গ্রাম), সাবানের গুড়া (৫ গ্রাম) ও নিমের পাতার নির্যাস প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ব্যবহার করা ।

৭। বেশি পোকা দেখা দিলে এডমায়ার ২০ এসএল ০.৫ মিলি./লি হারে পানিতে শিশিয়ে স্প্রে করা।


করনীয়ঃ

১। আগাম বীজ বপন করা।

২। সুষম সার ব্যবহার করা।

 

পোকার নামঃ চীনাবাদামের জাবপোকা বা এফিড 


জাব পোকার আক্রমণ


লক্ষণঃ

১। পিপীলিকার উপস্থিতি এ পোকার উপস্থিতিকে অনেক ক্ষেত্রে জানান দেয় ।

২। এরা পাতা ও কচি ডগার রস চুসে খায়।

৩। এর আক্রমণ বেশি হলে শুটি মোল্ড ছত্রাকের আক্রমণ ঘটে এবং গাছ মরে যায় ।


ব্যবস্থাপনাঃ

১। হাত দিয়ে পিশে পোকা মেরে ফেলা।

২। আক্রান্ত পাতা অপসারণ করা।

৩। পরভোজী পোকা যেমন: লেডিবার্ডবিটল লালন।

৪। ডিটারজেন্ট পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করা।

৫। প্রতি গাছে ৫০ টির বেশি পোকার আক্রমণ হলে গেইন ২০ এসএল বা সাইপারফস ৫৫ ইসি ২ মি.লি. / লি. হারে পানিতে মিশিয়ে শেষ বিকেলে স্প্রে করা।


সাবধানতাঃ

১। বিলম্বে বপন করবেন না।


করনীয়ঃ

১। আগাম বাদাম বপন করুন।

২। উন্নত জাতের বাদাম বপন করুন।

 


পোকার নামঃ চীনাবাদামের উঁইপোকা 


উঁই পোকার আক্রমণ

লক্ষণঃ

এরা চীনাবাদামের মূল শিকড় ও কান্ড খেয়ে ক্ষতি করে এবং গাছ মরে যায় ।

ব্যবস্থাপনাঃ

১। রানীসহ উঁইপোকার দল ধ্বংস করা ।

২। খাদ্য ফাঁদ ব্যবহার করা (মাটির হাড়িতে পাট কাঠি, ধৈঞ্চা রেখে জমিতে পুতে রেখে পরে তুলে উঁইপোকাগুলো মেরে ফেলা)।

৩। সেচ দিয়ে কিছু সময় পানি ধরে রাখা ।

৪। রিজেন্ট ৩ জিআর ৩৩.০ কেজি / হেঃ হারে প্রয়োগ করা । মাটিতে জোঁ থাকা বাঞ্চনীয় ।


সাবধানতাঃ

১। বিলম্বে বপন করবেন না।


করনীয়ঃ

১। আগাম বাদাম বপন করুন।

২। উন্নত জাতের বাদাম বপন করুন ।

 

পোকার নামঃ চীনাবাদামের বিছা পোকা 


বিছা পোকার আক্রমণ


লক্ষণঃ

১। পাতার উল্টো পিঠের সবুজ অংশ খেয়ে পাতাকে সাদা পাতলা পর্দার মত করে ফেলে।

২। এরা সারা মাঠে ছড়িয়ে পড়ে এবং পুরো পাতা খেয়ে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে।


ব্যবস্থাপনাঃ

১। পাতায় ডিমের গাদা দেখলে তা তুলে ধ্বংস করতে হবে।

২। ডিম আথবা আক্রমণের প্রথম অবস্থায় কীড়াগুলো যখন পাতায় দলবদ্ধ অবস্থায় থাকে তখন পোকা সমেত পাতাটি তুলে পায়ে মাড়িয়ে বা গর্তে চাপা দিয়ে মারতে হবে।

৩। কার্বারিল গ্রুপের কীটনাশক যেমন: ভিটাব্রিল ৮৫ ডব্লিউপি ৩ গ্রাম বা সাইপারমেথ্রিন গ্রুপের কীটনাশক যেমন: কট ১০ ইসি ১ মিলি বা সিমবুশ ১০ ইসি ০.৫ মিলি./ লি হারে পানিতে মিশিয়ে ব্যবহার করতে হবে।

৪। ভালভাবে পোকা দমন করতে হলে ক্ষেতের আশে পাশে বা অন্য আগাছা থাকলে তা পরিষ্কার করে ফেলতে হবে।

৫। বিছা পোকা যাতে এক ক্ষেত হতে অন্য ক্ষেতে ছড়াতে না পারে সে জন্য প্রতিবন্ধক নালা তৈরী করা যায়।


সাবধানতাঃ

১। ক্ষেতের আশপাশ অপরিচ্ছন্ন রাখবেন না।


করনীয়ঃ

১। নিয়মিত মাঠ পরিদর্শন করে আক্রমণের শুরুতেই ব্যবস্থা নিন।

 


পোকার নামঃ চীনাবাদামের জেসিড পোকা


জ্যাসিড পোকার আক্রমণ


লক্ষণঃ

১। পূর্ণ বয়স্ক ও বাচ্চা উভয়ই ক্ষতি করে ।

২। চারা গাছ থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত এরা পাতার রস খায় ।

৩। আক্রান্ত পাতা বিবর্ণ হয় ।

৪। পাতা হলুদ হতে তামা রং হয় এবং পরে শুকিয়ে যায় ।

ব্যবস্থাপনাঃ

১। হাত জাল দ্বারা পোকা সংগ্রহ ।

২। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন চাষাবাদ।

৩। ফাঁদ শস্য যেমন ক্ষেতের চারদিকে বেগুন লাগানো।

৪। আক্রান্ত গাছে ছাই ছিটানো।

৫। ০.৫% ঘনত্বের সাবান পানি অথবা ৫ মিলি তরল সাবান প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করা।

৬। ক্ষেতে মাকড়সা সংরক্ষণ করা (১টি মাকড়সা গড়ে দিনে ২-১৫টি জ্যাসিড শিকার করে খায় ।

৭। ৫০০ গ্রাম নিম বীজের শাঁস পিষে ১০ লিটার পানিতে ১২ ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে তা ছেঁকে জ্যাসিড আক্রান্ত ক্ষেতে স্প্রে করলে উপকার পাওয়া যেতে পারে ।

৮। পোকা দমনের জন্য প্রতি লিটার পানিতে ডায়মেথোয়েট ৪০ ইসি (রগর, টাফগর, সানগর, পারফেকথিয়ন)১মিঃলিঃ এডমায়ার ১ মিঃলিঃ মেটাসিস্টক্স ১ মিঃলিঃ সবিক্রন ১মিঃলিঃ, এসাটাফ- ১.৫ গ্রাম মিশিয়ে স্প্রে করা যেতে পারে ।


করনীয়ঃ

১। আগাম বীজ বপন করা।

২। সুষম সার ব্যবহার করা।

৩। সঠিক দুরত্বে চারা রোপন করুন।



www.krishokseba.com



চিনাবাদামের পোকা মাকড়ের আক্রমণ বিষয়ক লিফলেট ডাউনলোড করে কাছে রাখুন














একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)