কলার বিভিন্ন রোগের লক্ষণ, ব্যবস্থাপনা, সাবধানতা ও করনীয় নির্দেশনা
কলা বাগানে আক্রমণকারী কিছু রোগ ও পোকার আক্রমণ লক্ষণ, ব্যবস্থাপনা ও সাবধানতা সংক্রান্ত প্রতিবেদন কৃষক ভাইদের জন্য তুলে ধরা হলো।
রোগের নামঃ কলার কর্ডানা দাগ রোগ
![]() |
কলার কর্ডানা দাগ রোগের লক্ষণ |
লক্ষণঃ
গাছের পাতায় বড় গোলাকার দাগ পড়ে, ফলন কমে যেতে পারে।
ব্যবস্থাপনাঃ
১। রোগাক্রান্ত পাতা বা পাতার অংশ কেটে পুড়িয়ে ফেলা ।
২। রোগ দেখা দিলে প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে ম্যানকোজেব ১৫ দিন অন্তর স্প্রে করা ।
সাবধানতাঃ
আক্রান্ত বাগান থেকে চারা সংগ্রহ করবেন না।
করনীয়ঃ
১। কলা সংগ্রহের পর পর পাতা পুড়িয়ে ফেলা।
২। সঠিক দূরত্বে গাছ লাগাতে হবে যেন সব গাছ পর্যাপ্ত আলো বাতাস পায়।
আরও: মসলা ফসল চাষ পদ্ধতি
রোগের নামঃ কলার কিউকাম্বার মোজাইক ভাইরাস রোগ
![]() |
কলার কিউকাম্বার মোজাইক ভাইরাস রোগের লক্ষণ |
লক্ষণঃ
পাতায় হলুদাভ সবুজদাগের মিশ্রণ থাকে, ফলন ব্যাপকভাবে কমে যায়।
ব্যবস্থাপনাঃ
১। আক্রান্ত গাছ দেখামাত্র গোড়াসহ তুলে পুড়ে বা পুতে ফেলা।
২। বাগানের আগাছা দমন করা।
৩। ভাইরাসের বাহক পোকা (জাবপোকাও থ্রিপস) দমনের জন্য অনুমোদিত বালাইনাশক
(এসাটাফ, টিডো, এডমায়ার) প্রতি লিটার পানিতে ২ মি.লি হারে মিশিয়ে ব্যবহার করা।
সাবধানতাঃ
আক্রান্ত বাগান থেকে চারা সংগ্রহ করবেন না।
করনীয়ঃ
১। সুস্থ সবল চারা রোপন করা।
২। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন জাত ব্যবহার করা।
আরও: ধানের জাত পরিচিতি ও নলেজ ব্যাংক
রোগের নামঃ কলা গাছের কান্ডের উইভিল
![]() |
লা গাছের কান্ডের উইভিল |
লক্ষণঃ
পূর্ণবয়স্ক বিটল কলা গাছের গোড়ায় শিকড়ের উপর ডিম পাড়ে । ডিম ফুটে গ্রাব (বাচ্চা) বের হয় এবং ভেতরে ঢুকে যায় । ক্রমেই এটি উপর দিকে উঠে ও কান্ডের মাঝে কুরে কুরে খায় ও আক্রান্ত অংশ পঁচে যায় । আক্রমণের মাত্রা বেশী হলে ডগার পাতা শুকিয়ে যায় এবং কোন কলা হয় না এবং গাছ মরে যায় ।
ব্যবস্থাপনাঃ
১। বাগান পরিস্কার রাখা।
২। আক্রান্ত গাছ গোড়াসহ তুলে নষ্ট করা ।
৩। আক্রমণ বেশি হলে দানাদার বালাইনাশক কার্বোফুরান ৫জি বা ডায়াজিনন ৬০ইসি অনুমোদিত মাত্রায় ব্যবহার করা (১০গ্রাম/গাছ)।
সাবধানতাঃ
১। ক্ষেতের আশেপাশে অপরিচ্ছন্ন রাখবেন না।
২। এ পোকা আক্রান্ত ক্ষেত থেকে চারা সংগ্রহ না করা ।
৩। একই বাগানের বার বার কলা চাষ না করা ।
করনীয়ঃ
১। কলা রোপনের আগে গোড়া পরিস্কার করা ।
২। আক্রান্ত জমিতে ২-৩ বছর কলা আবাদ না করে অন্য ফসল আবাদ করা যেতে পারে।
আরও: আপদের লক্ষণ ও প্রতিকার ব্যবস্থাপনা
রোগের নামঃ কলার সিগাটোকা রোগ
লক্ষণঃ
এ রোগের আক্রমণে পুরানা পাতার উপর হলুদ দাগ পড়ে। দাগের আকার ক্রমশ বড় হয় এবং বাদামি বর্ণ ধারণ করে ।
ব্যবস্থাপনাঃ
১। আক্রান্ত পাতা কেটে নষ্ট করা বা পুড়ে ফেলা।
২। সুষম সার ব্যবহার করা।
৩। আক্রান্ত গাছে কার্বেন্ডাজিম ২ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ১৫ দিন পরপর স্প্রে করা।
আরও: মাঠ ফসল চাষ পদ্ধতি
রোগের নামঃ কলার পানামা রোগ
![]() |
কলার পানামা রোগ |
লক্ষণঃ
এ রোগে প্রথমে বয়স্ক পাতার কিনারা হলুদ হয় এবং পরে কচি পাতাও হলুদ রং ধারণ করে। পরবর্তিতে পাতা বোটার কাছে ভেঙ্গে নিচের দিকে ঝুলে পড়ে এবং গাছ মারা যায়। কোন কোন সময় গাছ লম্বা লম্বিভাবে ফেটেও যায়। ভিতরের লক্ষণ- ভাসকুলার বান্ডল হলদে বাদামী রং হয়।
ব্যবস্থাপনাঃ
১।আক্রান্ত গাছগোড়া সহ উঠিয়ে পুড়ে ফেলা।
২। ফাঁকা স্থানে নতুন রোগমুক্ত চারা রোপণ করা।
৩। বাগান পরিস্কার রাখা।
সাবধানতাঃ
১। আক্রান্ত বাগান থেকে চারা সংগ্রহ করবেন না।
২। আক্রান্ত জমিতে অন্তত ৪ বছর কলা চাষ করবেন না ।
করনীয়ঃ
১। চারা লাগানোর পূর্বে গর্তে ১% ফরমালিন ও ৫০ ভাগ পানি দ্বারা ভিজিয়ে দেয়া এবং ১০-১২ দিন পর চারা রোপন করা।
২। শস্য পর্যায় অনুসরন করা।
আরও: মসলা ফসল চাষ পদ্ধতি
রোগের নামঃ কলার গুচ্ছমাথা রোগ / ভাইরাস রোগ
![]() |
কলার গুচ্ছমাথা রোগ / ভাইরাস রোগ |
লক্ষণঃ
এ রোগের কারণে কলা গাছের বৃদ্ধি হ্রাস পায় এবং পাতা গুচ্ছাকারে বের হয়। পাতা আকারে খাটো, অপ্রস্থ এবং উপরের দিকে খাড়া থাকে। কচি পাতার কিনারা উপরের দিকে বাকানো এবংহলুদ রংয়ের হয়। পাতার শিরার মধ্যে ঘন সবুজ দাগ পড়ে।
ব্যবস্থাপনাঃ
১। আক্রান্ত গাছ দেখামাত্র গোড়াসহ তুলে পুড়ে বা পুতে ফেলা।
২। ভাইরাসের বাহক পোকা (জাবপোকাও থ্রিপস) দমনের জন্য অনুমোদিত বালাইনাশক (এসাটাফ, টিডো, এডমায়ার) প্রতি লিটার পানিতে ২ মি.লি হারে মিশিয়ে ব্যবহার করা।
সাবধানতাঃ
আক্রান্ত বাগান থেকে চারা সংগ্রহ করবেন না।
করনীয়ঃ
১। সুস্থ সবল চারা রোপণ করা।
২। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন জাত ব্যবহার করা।
আরও: বালাইনাশক সেবা
রোগের নামঃ কলার পাতা ও ফলের বিটল
![]() |
কলার পাতা ও ফলের বিটল |
লক্ষণঃ
এর আক্রমণে পাতার ও ফলের উপর সরু লম্বা দাগ পড়ে। এর আক্রমণে ফলের খাদ্যমান ও উৎপাদন তেমন ব্যহত হয়না কিন্তু বাজার মূল্য কিছুটা কমে যায়।
ব্যবস্থাপনাঃ
১। আক্রান্ত পাতা কেটে নষ্ট করা বা পুড়ে ফেলা।
২। বাগানে আঠাযুক্ত বোর্ড স্থাপন করা।
৩। বাগানে আলোর ফাঁদ স্থাপন করা।
৪। আক্রান্ত গাছে ৫ গ্রাম সাবানের গুড়া প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে সপ্তাহে ২ দিন পাতার নিচ
দিয়ে স্প্রে করা।
৫। ইমিডাক্লোরোপ্রিড ১ মি.লি. / লি. হারে পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করা।
করনীয়ঃ
১। আগাছা পরিষ্কার রাখা।
আরও: ধানের জাত পরিচিতি ও নলেজ ব্যাংক
রোগের নামঃ কলার এনথ্রাকনোজ রোগ
![]() |
কলার এনথ্রাকনোজ রোগ |
লক্ষণঃ
এ রোগের আক্রমণে কলার উপর ছোট ছোট বাদামী দাগ পড়ে।দাগগুলো পরে বড় হয় এবং কাল শক্ত গুটলির মত ক্ষত সৃষ্টি হয়। দাগের আকার ক্রমশ বড় হয় এবং বাদামি বর্ণ ধারণ করে ।
ব্যবস্থাপনাঃ
১। বাগান পরিস্কার রাখা।
২। সুষম সার ব্যবহার করা।
৩। বাগানে এর আগে এ রোগের ঘটনা থাকলে গাছে কার্বেন্ডাজিম (যেমন: এমকোজিম ৫০ ডব্লিউপি) ২ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করা।
আরও: ফসল চাষ
রোগের নামঃ কলা গাছের কান্ডের উইভিল
![]() |
কলা গাছের কান্ডের উইভিল |
লক্ষণঃ
পূর্ণবয়স্ক বিটল কলা গাছের গোড়ায় শিকড়ের উপর ডিম পাড়ে। ডিম ফুটে গ্রাব (বাচ্চা) বের হয় এবং ভেতরে ঢুকে যায়। ক্রমেই এটি উপর দিকে উঠে ও কান্ডের মাঝে কুরে কুরে খায় ও আক্রান্ত অংশ পচে যায়। আক্রমণের মাত্রা বেশী হলে ডগার পাতা শুকিয়ে যায় এবং কোন কলা হয় না এবং গাছ মরে যায় ।
ব্যবস্থাপনাঃ
১। বাগান পরিস্কার রাখা।
২। আক্রান্ত গাছ গোড়াসহ তুলে নষ্ট করা ।
৩। আক্রমণ বেশি হলে দানাদার বালাইনাশক কার্বোফুরান ৫জি বা ডায়াজিনন ৬০ ইসি অনুমোদিত মাত্রায় ব্যবহার করা (১০গ্রাম/গাছ)।
সাবধানতাঃ
১। ক্ষেতের আশেপাশে অপরিচ্ছন্ন রাখবেন না।
২। এ পোকা আক্রান্ত ক্ষেত থেকে চারা সংগ্রহ না করা।
৩। একই বাগানের বার বার কলা চাষ না করা।
করনীয়ঃ
১। কলা রোপনের আগে গোড়া পরিস্কার করা।
২। আক্রান্ত জমিতে ২-৩ বছর কলা আবাদ না করে অন্য ফসল আবাদ করা যেতে পারে।
আরও: আখ ফসলের জাত ও বৈশিষ্ঠ্য
সর্বপরি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন চাষাবাদ কলা চাষের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। তাই কলা বাগান সর্বদা রোগ জীবানুর বাহকের বসবাস উপযোগী আগাছা ও অন্যান্য গাছপালা পরিস্কার রেখে বাগান পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে যেন কোন রোগ জীবানু আবাস স্থল হিসাবে কলা বাগানকে বেছে নিতে না পারে।পাশাপাশি এসব আগাছা পোকামাকড়ের বসবাসযোগ্য স্থান এবং বংশ বৃদ্ধির জন্য উপযোগী পরিবেশ তৈরী করায় সর্বদা বাগান পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা কৃষক ভাইদের জন্য খুবই জরুরী। তাছাড়া কলা গাছের ঝোপে অপ্রয়োজনীয় কলা গাছ এবং রোগাক্রান্ত কলা চারাগাছ সব সময় পরিষ্কার করে রাখতে পারলে এক দিকে যেমন কলা গাছ ও ফলকে রোগের আক্রমণ থেকে রক্ষা করা যায়, অন্যদিকে কলা গাছের ফলনও বৃদ্ধিসহ বানিজ্যিক ভাবে কৃষক ভাইয়েরা আশানুরুপ লাভ দেখতে পারেন।
আরও: আপদের লক্ষণ ও প্রতিকার ব্যবস্থাপনা
তাই কলা থেকে প্রাপ্ত পুষ্টি চাহিদা পূরণের জন্য কলা বাগানকে রোগ ও পোকা মাকড়েরর হাত থেকে রক্ষা করার জন্য কৃষক ভাইদের কলায় আক্রমণকারী পোকা ও রোগ জীবানুর আক্রমন, আক্রমনের ফলে লক্ষণ এবং প্রতিকার ও প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত জ্ঞান লাভের কোন বিকল্প নেই যেন তদানুযায়ী কলা চাষী ভাইয়েরা সাবধানতা ও করণীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেন।