কলার বিভিন্ন জাতের বৈশিষ্ট্য, উপকারিতা এবং চাষাবাদ পদ্ধতি

কৃষক ভাইদের জন্য ফলজাতীয় ফসল কলার বিভিন্ন জাতের বৈশিষ্ট্য, উপকারিতা ও চাষাবাদ পদ্ধতি


কাঁচকলা একটি গুরুত্বপূর্ণ সবজি। এটি পাকা কলা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। এর বৈজ্ঞানিক নাম সুসা প্যারাডিসিকা। কাঁচকলা অত্যন্ত পুষ্টিকর। পুষ্টিবিজ্ঞানীদের তথ্যমতে এতে রয়েছে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট, লোহা, ভিটামিন ‘এ’, অক্সালিক অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, পটাসিয়াম, থায়াসিন, রিবোফ্ল্যাবিন ও ভিটামিন ‘সি’। একটি কাঁচকলা খোসা সমেত টুকরো টুকরো করে কেটে প্রতিরাতে পানিতে ভিজিয়ে রেখে পরদিন সকালে ওই পানি পান করলে আমাশয় রোগ নির্মূল হয়। এভাবে এক মাস খেতে হবে।

 



এ ছাড়া পেটের অসুখে কাঁচকলা সিদ্ধ করে টাটকা টক দইয়ের সাথে মেখে খেলে রোগ সারে। কাঁচকলা শুকিয়ে গুঁড়া করে প্রতিদিন অল্প পরিমাণ দুধের সাথে মিশিয়ে খেলে যৌনব্যাধি ও প্রস্রাবের অসুখ সারে। ফল হিসেবে কলা অনেকে পছন্দ করলেও, সবজি হিসেবে কলা অনেকেই পছন্দ করেন না। কিন্তু সবজি হিসেবে কাঁচা কলা বেশ স্বাস্থ্যকর। ভিটামিন, মিনারেলসহ আরও অনেক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন একটি সবজি কাঁচা কলা। রোগীর পথ্য হিসেবে কাঁচা কলা পরিচিত থাকলেও স্বাস্থ্যকর এই সবজিটি প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন। কাঁচা কলার স্বাস্থ্যগুণ নিম্নে দেয়া হলো।


"কাঁচা কলার উপকারিতা"

১। ওজন হ্রাস:

ওজন কমাতে চান, তবে খাদ্য তালিকায় রাখুন কাঁচা কলা! কাঁচা কলার ফাইবার দীর্ঘসময় পেট ভরিয়ে রাখে। এটি আঁশযুক্ত হওয়ায় তা মেদ কাটতে সাহায্য করে। কাঁচা কলার তরকারি খাদ্য তালিকায় রাখা বয়ে আনবে অনেক রকমের সুফল।

২। চিনি নিয়ন্ত্রণ:

কলার আঁশযুক্ত হওয়ায় এটি রক্তে চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে। ভিটামিন বি৬ গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ করে টাইপ-2 ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।

৩। পটাশিয়ামের উৎস:

পাকা কলার মত কাঁচা কলায়ও প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম থাকে । এক কাপ কাঁচা কলায় রয়েছে ৫৩১ মিলিগ্রাম পটাসিয়াম। The American Heart Association গবেষণায় প্রকাশ করেছে যে, প্রতিদিন ৪৭০০ মিলিগ্রাম পটাসিয়াম গ্রহণে হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে। তবে পটাশিয়াম সবার জন্য নিরাপদ নয়। উচ্চ রক্ত চাপ আক্রান্ত রোগী অথবা কিডনি রোগে আক্রান্ত রোগীদের কিছুটা সাবধানে কাঁচা কলা গ্রহণ করা উচিত।

৪। হজমে সাহায্য:

আঁশযুক্ত সবজি হওয়ায় এটি খুব সহজে হজমযোগ্য। কাঁচা কলা পেটের ভিতরে খারাপ ব্যাকটেরিয়া দূর করে দেয়। তবে অতিরিক্ত পেট ফোলা সমস্যা থাকলে কাঁচা কলা খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত।

৫। কোলন ক্যান্সার:

কাঁচা কলা কোলন থেকে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া, জীবাণু এবং ইনফেকশন দূর করে কোলনকে সুস্থ রাখে। দীর্ঘমেয়াদী কোলন সংক্রান্ত রোগ দূর করতে কাঁচা কলা বেশ কার্যকরী।

৬। উচ্চ ভিটামিন বি-৬ এর উৎস:

কাঁচা কলা ভিটামিন বি-৬ এর অন্যতম উৎস। এক কাপ সিদ্ধ কাঁচা কলা দৈনিক ৩৯ভাগ ভিটামিন বি-৬ চাহিদা পূরণ করে। ভিটামিন বি-৬ রক্তে হিমোগ্লোবিন তৈরি করে, যা রক্তে অক্সিজেন পরিবহন করে। এছাড়া ভিটামিন বি-৬ রক্তে চিনি নিয়ন্ত্রণ করে।

৭। ডায়ারিয়া প্রতিরোধ:

কাঁচা কলায় থাকা এনজাইম ডায়রিয়া এবং পেটের নানা ইনফেকশন দূর করে। ডায়রিয়া দেখা দিলে চিকিৎসকরা কাঁচা কলা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

আরও: ধানে আক্রমনকারী ক্ষতিকর পোকার লক্ষণ, সাবধানতা, ব্যবস্থাপনা ও করনীয় বিষয়


কলার জাত সমূহঃ

জাতের নাম

স্থানীয় নাম

জীবন কাল

উৎপাদন

বারি কলা-১

-

সারা বছর

৫০-৬০ টন কেজি

বারি কলা-২

-

সারা বছর

৩৫-৪০ টন কেজি

বারি কলা-৩

-

সারা বছর

৪৫-৫০ টন কেজি

বারি কলা-৪

-

সারা বছর

০ কেজি

বারি কলা-৫

কাঁচকলা

সারা বছর

৫০ টন কেজি

বীচি কলা

বাইস্যা কলা

-

০ কেজি


কলা - 
বারি কলা-১

জাত এর নামঃ বারি কলা-১

অবমূক্তকারী প্রতিষ্ঠানঃ বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট

জীবনকালঃ সারা বছর দিন

সিরিজ সংখ্যাঃ

উৎপাদন ( সেচ সহ ) / প্রতি হেক্টরঃ ৫০-৬০ টন কেজি

উৎপাদন ( সেচ ছাড়া )/ প্রতি হেক্টরঃ ০ কেজি


জাত এর বৈশিষ্টঃ

১। উচ্চ ফলনশীল এ জাতটি ২০০০ সালে উদ্ভাবিত হয়।

২। গাছ অমৃতসাগর জাতের গাছের চেয়ে খাঁট, অথচ ফলন দেড় থেকে দুই গুন বেশী।

৩। প্রতি কাদির ওজন প্রায় ২৫ কেজি, কাঁদিতে ৮-১১ টি ফানা থাকে।

৪। উপযুক্ত পরিচর্যা পেলে এ জাতের কাঁদিতে ১৫০-২০০টি কলা পাওয়া যায়।

৫। ফলের গড় ওজন ১২৫গ্রাম।

আরও: আপদের লক্ষণ ও প্রতিকার ব্যবস্থাপনা

চাষাবাদ পদ্ধতিঃ

           ১। বপনের সময় : বছরের যে কোন সময়েই কলার চারা রোপণ করা যায়। তবে অতিরিক্ত বর্ষা ও অতিরিক্ত শীতের সময় চারা না লাগানোই উত্তম। বর্ষার শেষে আশ্বিন-কার্তিক মাস চারা রোপণের সর্বোত্তম সময়।

           ২। মাড়াইয়ের সময় : ঋতু ভেদে রোপণের ১০-১৩ মাসের মধোই সাধারণত সব জাতের কলাই পরিপক্ক হয়ে থাকে।

           ৩। সার প্রয়োগ পদ্ধতি : মধ্যম উর্বর জমির জন্য গাছ প্রতি গোবর/আবর্জনা পঁচাসার ১০ কেজি, ইউরিয়া ৫০০ গ্রাম, টিএসপি ৪০০ গ্রাম, এমওপি ৬০০ গ্রাম, জিপসাম ২০০ গ্রাম, জিঙ্ক অকা্রাইড ১.৫ গ্রাম ও বরিক এসিড ২ গ্রাম প্রয়োগ করতে হবে। উল্লিখিত পরিমাণের সর্ম্পুণ গোবর, টিএসপি, জিপসাম, জিঙ্কঅক্সাইড ও বরিক এসিড এবং অর্ধেক এমওপি সার গর্ত তৈরির সময় গর্তে দিতে হয়। ইউরিয়া ও বাকী অর্ধেক এমওপি চারা রোপণের ২ মাস পর থেকে ২ মাস পর পর ৩ বারে এবং ফুল আসার পর আরও একবার গাছের চর্তুদিকে ছিটিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হয়। সার দেয়ার সময় জমি হালকাভাবে কোপাতে হবে যাতে শিকড় কেটে না যায়। জমির আর্দ্রতা কম থাকলে সার দেয়ার পর পানি সেচ দেয়া একান্ত প্রয়োজন।

           ৪। রোপনের দূরত্ব : ১.৫ - ২.০০ মিটার

           ৫। গর্তের আকার : ৬০ x ৬০ x ৬০ সেমি


কলা - বারি কলা - ২

জাত এর নামঃ বারি কলা-২

অবমূক্তকারী প্রতিষ্ঠানঃ  বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট

জীবনকালঃ সারা বছর দিন

সিরিজ সংখ্যাঃ

উৎপাদন ( সেচ সহ ) / প্রতি হেক্টরঃ ৩৫-৪০ টন কেজি

উৎপাদন ( সেচ ছাড়া ) / প্রতি হেক্টরঃ ০ কেজি


জাত এর বৈশিষ্টঃ

১। এ জাতটি বিদেশ থেকে আনীত ফিয়া (FHIA-3) নামে একটি উচ্চফলনশীল কাচ কলার হাইব্রিড জাত।

২। গাছ বেশ মোটা, শক্ত এবং মাঝারী আকারের।

৩। এ জাতের কলার কাদির ওজন ১৫-২০ কেজি।

৪। কলা মাঝারী (১০০ গ্রাম), গাঢ় সবুজ রংয়ের, সহজে সিদ্ধ হয় এবং ক্ষেতেও ভাল।

আরও: আখ ফসলের জাত ও বৈশিষ্ঠ্য


চাষাবাদ পদ্ধতিঃ

           ১। বপনের সময়: বছরের যে কোন সময়েই কলার চারা রোপণ করা যায়। তবে অতিরিক্ত বর্ষা ও অতিরিক্ত শীতের সময় চারা না লাগানোই উত্তম।

           ২। মাড়াইয়ের সময়: ঋতু ভেদে রোপণের ১০-১৩ মাসের মধ্যেই সাধারনত সব জাতের কলাই পরিপক্ক হয়ে থাকে। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ করলে কলার গাঁয়ের শিরাগুলো তিন-চতুর্থাংশ পুরো হলেই কাটতে হয়। তাছাড়াও কলার অগ্রভাগের পুষ্পাংশ শুকিয়ে গেলেই বুঝতে হবে কলা পুষ্ট হয়েছে।

           ৩। সার প্রয়োগ পদ্ধতি: মধ্যম উর্বর জমির জন্য গাছ প্রতি গোবর/আবর্জনা পঁচাসার ১০ কেজি, ইউরিয়া ৫০০ গ্রাম, টিএসপি ৪০০ গ্রাম, এমওপি ৬০০ গ্রাম, জিপসাম ২০০ গ্রাম, জিঙ্ক অকা্রাইড ১.৫ গ্রাম ও বরিক এসিড ২ গ্রাম প্রয়োগ করতে হবে। উল্লিখিত পরিমাণের সর্ম্পুণ গোবর, টিএসপি, জিপসাম, জিঙ্কঅক্সাইড ও বরিক এসিড এবং অর্ধেক এমওপি সার গর্ত তৈরির সময় গর্তে দিতে হয়। ইউরিয়া ও বাকী অর্ধেক এমওপি চারা রোপণের ২ মাস পর থেকে ২ মাস পর পর ৩ বারে এবং ফুল আসার পর আরও একবার গাছের চর্তুদিকে ছিটিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হয়। সার দেয়ার সময় জমি হালকাভাবে কোপাতে হবে যাতে শিকড় কেটে না যায়। জমির আর্দ্রতা কম থাকলে সার দেয়ার পর পানি সেচ দেয়া একান্ত প্রয়োজন।

কলা - বারি কলা - ৩

জাত এর নামঃ বারি কলা-৩

অবমূক্তকারী প্রতিষ্ঠানঃ বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট

জীবনকালঃ সারা বছর দিন

সিরিজ সংখ্যাঃ

উৎপাদন ( সেচ সহ ) / প্রতি হেক্টরঃ ৪৫-৫০ টন কেজি

উৎপাদন ( সেচ ছাড়া ) / প্রতি হেক্টরঃ ০ কেজি



জাত এর বৈশিষ্টঃ

১। বাংলা কলার উচ্চ ফলনশীল জাতটি ২০০৫ সালে পার্বত্য অঞ্চলে চাষাবাদের জন্য মুক্তায়ন করা হয়।

২। প্রতি কাদিতে ১৪০-১৫০ টি কলা হয় যার ওজন ২৩ - ২৫ কেজি।

৩। পাকা ফল হলুদ রংয়ের, সম্পূর্ণ বীজহীন, শাঁস আঠালো, মিষ্টি ও সুস্বাদু।

৪। পাকা ফল হলুদ রংয়ের, বীজহীন।

আরও: ভাল বীজ চেনার পদ্ধতি, বীজ শোধন উপায় এবং বীজতলা তৈরী সম্পর্কে কৃষক ভাইদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

চাষাবাদ পদ্ধতিঃ

           ১। বপনের সময়: বছরের যে কোন সময়েই কলার চারা রোপণ করা যায়। তবে অতিরিক্ত বর্ষা ও অতিরিক্ত শীতের সময় চারা না লাগানোই উত্তম। বর্ষার শেষে আশ্বিন-কার্তিক মাস চারা রোপণের সর্বোত্তম সময়।

          ২। মাড়াইয়ের সময়: ঋতু ভেদে রোপণের ১০-১৩ মাসের মধ্যেই সাধারনত সব জাতের কলাই পরিপক্ক হয়ে থাকে। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ করলে কলার গাঁয়ের শিরাগুলো তিন-চতুর্থাংশ পুরো হলেই কাটতে হয়। তাছাড়াও কলার অগ্রভাগের পুষ্পাংশ শুকিয়ে গেলেই বুঝতে হবে কলা পুষ্ট হয়েছে।

          ৩। সার প্রয়োগ পদ্ধতি: মধ্যম উর্বর জমির জন্য গাছ প্রতি গোবর/আবর্জনা পঁচাসার ১০ কেজি, ইউরিয়া ৫০০ গ্রাম, টিএসপি ৪০০ গ্রাম, এমওপি ৬০০ গ্রাম, জিপসাম ২০০ গ্রাম, জিঙ্ক অকা্রাইড ১.৫ গ্রাম ও বরিক এসিড ২ গ্রাম প্রয়োগ করতে হবে। উল্লিখিত পরিমাণের সর্ম্পুণ গোবর, টিএসপি, জিপসাম, জিঙ্কঅক্সাইড ও বরিক এসিড এবং অর্ধেক এমওপি সার গর্ত তৈরির সময় গর্তে দিতে হয়। ইউরিয়া ও বাকী অর্ধেক এমওপি চারা রোপণের ২ মাস পর থেকে ২ মাস পর পর ৩ বারে এবং ফুল আসার পর আরও একবার গাছের চর্তুদিকে ছিটিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হয়। সার দেয়ার সময় জমি হালকাভাবে কোপাতে হবে যাতে শিকড় কেটে না যায়। জমির আর্দ্রতা কম থাকলে সার দেয়ার পর পানি সেচ দেয়া একান্ত প্রয়োজন।


কলা - বারি কলা - ৪

জাত এর নামঃ বারি কলা-৪

অবমূক্তকারী প্রতিষ্ঠানঃ বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট

জীবনকালঃ সারা বছর দিন

সিরিজ সংখ্যাঃ

উৎপাদন ( সেচ সহ ) / প্রতি হেক্টরঃ ০ কেজি

উৎপাদন ( সেচ ছাড়া ) / প্রতি হেক্টরঃ ০ কেজি


জাত এর বৈশিষ্টঃ

১। পার্বত্য এলাকা থেকে নির্বাচিত চাপা কলার একটি উচ্চ ফলনশীল জাত।

২। প্রতি কাদিতে ফলের সংখ্যা ১৭৮টি যার ওজন প্রায় ১৯ কেজি।

৩। ফল মাঝারী আকারের গড় ওজন ৯৭ গ্রাম।

৪। ফল পাকা হলদে রংয়ের সম্পূর্ণ বীজ বিহীন এবং টক মিষ্টি (ব্রিকা্র মান ২০%) স্বাদের।

৫। হেক্টর প্রতি ফলন ৪০-৪৫ টন।

আরও:ধানের আদর্শ বীজতলা তৈরী পদ্ধতি, ভাল বীজের বৈশিষ্ঠ্য ও বীজ শোধন পদ্ধতি বিষয়ক তথ্য

চাষাবাদ পদ্ধতিঃ

           ১। বপনের সময়: বছরের যে কোন সময়েই কলার চারা রোপণ করা যায়। তবে অতিরিক্ত বর্ষা ও অতিরিক্ত শীতের সময় চারা না লাগানোই উত্তম। বর্ষার শেষে আশ্বিন-কার্তিক মাস চারা রোপণের সর্বোত্তম সময়।

           ২। মাড়াইয়ের সময়: ঋতু ভেদে রোপণের ১০-১৩ মাসের মধ্যেই সাধারনত সব জাতের কলাই পরিপক্ক হয়ে থাকে। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ করলে কলার গাঁয়ের শিরাগুলো তিন-চতুর্থাংশ পুরো হলেই কাটতে হয়। তাছাড়াও কলার অগ্রভাগের পুষ্পাংশ শুকিয়ে গেলেই বুঝতে হবে কলা পুষ্ট হয়েছে।

           ৩। সার প্রয়োগ পদ্ধতি: মধ্যম উর্বর জমির জন্য গাছ প্রতি গোবর/আবর্জনা পঁচাসার ১০ কেজি, ইউরিয়া ৫০০ গ্রাম, টিএসপি ৪০০ গ্রাম, এমওপি ৬০০ গ্রাম, জিপসাম ২০০ গ্রাম, জিঙ্ক অকা্রাইড ১.৫ গ্রাম ও বরিক এসিড ২ গ্রাম প্রয়োগ করতে হবে। উল্লিখিত পরিমাণের সর্ম্পুণ গোবর, টিএসপি, জিপসাম, জিঙ্কঅক্সাইড ও বরিক এসিড এবং অর্ধেক এমওপি সার গর্ত তৈরির সময় গর্তে দিতে হয়। ইউরিয়া ও বাকী অর্ধেক এমওপি চারা রোপণের ২ মাস পর থেকে ২ মাস পর পর ৩ বারে এবং ফুল আসার পর আরও একবার গাছের চর্তুদিকে ছিটিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হয়। সার দেয়ার সময় জমি হালকাভাবে কোপাতে হবে যাতে শিকড় কেটে না যায়। জমির আর্দ্রতা কম থাকলে সার দেয়ার পর পানি সেচ দেয়া একান্ত প্রয়োজন।


কলা - বারি কলা-৫

জাত এর নামঃ বারি কলা-৫

আঞ্চলিক নামঃ কাঁচকলা

অবমূক্তকারী প্রতিষ্ঠানঃ বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট

জীবনকালঃ সারা বছর দিন

সিরিজ সংখ্যাঃ

উৎপাদন ( সেচ সহ ) / প্রতি হেক্টরঃ ৫০ টন কেজি

উৎপাদন ( সেচ ছাড়া ) / প্রতি হেক্টরঃ ০ কেজি



জাত এর বৈশিষ্টঃ

১। জাতটি উচ্চ ফলনশীল ও সুস্বাদু।

২। গাছ বেশ মোটা, শক্ত এবং মাঝারী আকারের।

৩। কলা আকারে লম্বা, খোসা মধ্যম মোটা।

৪। প্রতি কাদিতে কলার সংখ্যার গড়ে ৯৫টি ।

৫। জাতটি সমগ্র দেশে বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদের উপযোগী।

৬। কাদির গড় ওজন ২০ কেজি ।

আরও: ফসল চাষ

চাষাবাদ পদ্ধতিঃ

         ১। বপনের সময়: বছরের যে কোন সময়েই কলার চারা রোপণ করা যায়। তবে অতিরিক্ত বর্ষা ও অতিরিক্ত শীতের সময় চারা না লাগানোই উত্তম। বর্ষার শেষে আশ্বিন-কার্তিক মাস চারা রোপণের সর্বোত্তম সময়।

         ২। মাড়াইয়ের সময়: চারা রোপণের ৮-৯ মাস পর।

         ৩। সার প্রয়োগ পদ্ধতি: মধ্যম উর্বর জমির জন্য গাছ প্রতি গোবর/আবর্জনা পঁচাসার ১০ কেজি, ইউরিয়া ৫০০ গ্রাম, টিএসপি ৪০০ গ্রাম, এমওপি ৬০০ গ্রাম, জিপসাম ২০০ গ্রাম, জিঙ্ক অকা্রাইড ১.৫ গ্রাম ও বরিক এসিড ২ গ্রাম প্রয়োগ করতে হবে। উল্লিখিত পরিমাণের সম্পূর্ণ গোবর, টিএসপি, জিপসাম, জিঙ্কঅক্সাইড ও বরিক এসিড এবং অর্ধেক এমওপি সার গর্ত তৈরির সময় গর্তে দিতে হয়। ইউরিয়া ও বাকী অর্ধেক এমওপি চারা রোপণের ২ মাস পর থেকে ২ মাস পর পর ৩ বারে এবং ফুল আসার পর আরও একবার গাছের চর্তুদিকে ছিটিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হয়। সার দেয়ার সময় জমি হালকাভাবে কোপাতে হবে যাতে শিকড় কেটে না যায়। জমির আর্দ্রতা কম থাকলে সার দেয়ার পর পানি সেচ দেয়া একান্ত প্রয়োজন।

কলা - বীচি কলা

জাত এর নামঃ বীচি কলা

আঞ্চলিক নামঃ বাইস্যা কলা

অবমূক্তকারী প্রতিষ্ঠানঃ স্থানীয়

জীবনকালঃ ০ দিন

উৎপাদন ( সেচ সহ ) / প্রতি হেক্টরঃ ০ কেজি

উৎপাদন ( সেচ ছাড়া ) / প্রতি হেক্টরঃ ০ কেজি


জাত এর বৈশিষ্টঃ

১। বৃহত্তর ময়মনসিংহে প্রাপ্ত কলা প্রজাতির বিভিন্ন জাতের মধ্যে বীচি কলা সবচাইতে বড় এবং ওজনে বেশী। এটি অন্য কলার চাইতে মিষ্টি বেশী , কিন্তু বীচিবহুল। বীচির কারণে অনেকেই এই কলা পছন্দ করে না। কিন্তু দরিদ্রদের মধ্যে এটি খুবই প্রচলিত। মায়েরা পাকা কলা চটকিয়ে চালনিতে চেলে বীচি ছাড়িয়ে শিশুকে খাওয়ায়। লক্ষ্য করা যায়, দুধপোষ্য শিশুর চাইতে কলা খাওয়া শিশুদের স্বাস্থ্য কোন অংশেই কম নয়। ময়মনসিংহে সর্বত্র রাস্তার পাশে , গৃহস্থের বাড়ির আঙ্গিনায় সারি সারি যে কলাগাছ শোভা বর্ধন করে থাকে তার অধিকাংশই বীচি কলা বা বাইশ্যা কলার গাছ। প্রচলিত আছে , কাদিতে বাইশ হালি কলা ধরে বলে এর নাম বাইশ্যা কলা। এ কলার চারা একবার রোপণ করলে বংশ পরম্পরায় ভিটের জমি ও সড়কের দু’পাশ আঁকড়ে থাকে। কোন প্রকার সেবা পরিচর্যা ছাড়াই বারো মাস ফল দেয়। বৃহত্তর ময়মনসিংহের বিখ্যাত কলার পিঠা বাইশ্যা কলার রস থেকে তৈরি হয়ে থাকে। দুধ- ভাতের সাথে এই কলা বিশেষ স্বাদ – গন্ধ আনে বলে অনেক গৃহস্থের বাড়িতে এটির বিশেষ কদর রয়েছে। এই কলার মোচা বা থোড় তরকারি রান্নায় সুস্বাদু বলে বাজারে এর দাম বেশী। দরিদ্র শিশুদের মধ্যে কলা তেতুলে ভর্তা করে খাবার প্রচলন দেখা যায়। এক সময় গৃহস্থের বাড়িতে এ কলা গাছের খোল রোদে শুকিয়ে আগুনে পুড়িয়ে ক্ষার তৈরি করা হতো। এই ক্ষার দিয়েই প্রতিমাসের কাপড়- চোপড় ধোয়া হতো। বিভিন্ন পার্বনে কলার পাতা ও খোলে দাওয়াত খাওয়ার প্রচলন রয়েছে। শুকনো কলার পাতা দিয়ে বাড়ির আঙ্গিনায় বেড়া দেয়ার প্রচলন এখনও গ্রামাঞ্চলে দেখা যায়। বিগত এক দশক ধরে আধুনিক উন্নত ও হাইব্রিড জাতের কলার চাষ হলেও পরম্পরার সাক্ষী হয়ে আঙ্গিনায় আজও টিকে আছে বাইশ্যা কলা।

আরও: ধানের জাত পরিচিতি ও নলেজ ব্যাংক

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)