ধানের আদর্শ বীজতলা তৈরী পদ্ধতি, ভাল বীজের বৈশিষ্ঠ্য ও বীজ শোধন পদ্ধতি বিষয়ক তথ্য

ধানের আদর্শ বীজতলা তৈরী পদ্ধতি, কৃষক ভাইদের জন্য ভাল বীজের বৈশিষ্ঠ্য ও বীজ শোধন পদ্ধতি বিষয়ক তথ্য

ধানের বীজতলা

জমির একটি অংশ যেখানে বীজ বপন করে চারা তৈরি করা হয়। চারাগাছ রোপণের আগে তাদের বেড়ে ওঠার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে। কিছু ফসলের জন্য, যেমন- ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, বেগুন ইত্যাদি, চারা তৈরি করা প্রয়োজন হয়। বীজতলার মাধ্যমে চারার যত্ন নেয়া সহজ হয় এবং রোগাক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা কম থাকে। 

বিভিন্ন ধরনের বীজতলার পদ্ধতি রয়েছে, বীজতলা সাধারণত চার প্রকার:  যেমন- শুকনা বীজতলা, ভেজা বীজতলা, দাপোগ বীজতলা এবং ভাসমান বীজতলা। 

আমন ধানের বীজতলা তৈরি

অগ্রহায়ণ মাস বোরো ধানের এবং আষাঢ় মাস রোপা আমন ধানের বীজতলা তৈরির উপযুক্ত সময়। রোদ পড়ে এমন উর্বর ও সেচ সুবিধাযুক্ত জমি বীজতলার জন্য নির্বাচন করতে হবে। চাষের আগে প্রতি বর্গমিটার (প্রায় ১ ফুট x ৩.৫ ফুট) জায়গার জন্য ২-৩ কেজি জৈব সার দিয়ে ভালোভাবে জমি তৈরি করতে হবে। পানি দিয়ে জমি থকথকে কাদা করে এক মিটার চওড়া এবং জমির দৈর্ঘ্য অনুসারে লম্বা করে ভেজা বীজতলা তৈরি করতে হবে। যেসব এলাকায় ঠান্ডার প্রকোপ বেশি সেখানে শুকনো বীজতলা তৈরি করতে পারেন। প্রতি দুই প্লটের মাঝে ২৫-৩০ সেমি. (প্রায় ১ ফুট) নালা রাখতে হবে।

যেসব এলাকায় সেচের পানির ঘাটতি থাকে সেখানে আগাম জাত হিসেবে ব্রি ধান২৮, ব্রি ধান৪৫ এবং ব্রি ধান৫৫, উর্বর জমি ও পানি ঘাটতি নাই এমন এলাকায় ব্রি ধান২৯, ব্রি ধান৫০, ব্রি ধান৫৮, ব্রি ধান৫৯, ব্রি ধান৬০, ব্রি হাইব্রিড ধান১, ব্রি হাইব্রিড ধান২ ও ব্রি হাইব্রিড ধান৩, ঠান্ডা প্রকোপ এলাকায় ব্রি ধান৩৬, হাওড় এলাকায় বিআর১৭, বিআর১৮, বিআর১৯, লবণাক্ত এলাকায় ব্রি ধান৪৭, ব্রি ধান৫৫, ব্রি ধান৬১ চাষ করতে পারেন। বীজ বপন করার আগে ৬০-৭০ ঘন্টা জাগ দিয়ে রাখতে হবে। এসময় ধানের অঙ্কুর গজাবে। অঙ্কুরিত বীজ বীজতলায় ছিটিয়ে বপন করতে হবে। প্রতি বর্গমিটার বীজ তলার জন্য ৮০-১০০ গ্রাম বীজের প্রয়োজন হয়।

আরও: ধানে আক্রমনকারী ক্ষতিকর পোকার লক্ষণ, সাবধানতা, ব্যবস্থাপনা ও করনীয় বিষয়


ধানের আদর্শ বীজতলা তৈরি

ধানের উৎপাদন বেশি করতে দরকার সুস্থ,সবল চারা।আর সুস্থ,সবল চারা পাওয়া যায় একটি  আদর্শ বীজতলার  তৈরির মাধ্যমে।কিন্তু আমাদের দেশের অনেক কৃষক জানেনা কিভাবে আদর্শ বীজতলা তৈরি করতে হয়। তাই আজ একটি আদর্শ বীজতলা কীভাবে তৈরি করতে হয় সেটা শিখব- 

১। উঁচু এবং দোআশ বা এটেল মাটি আছে এমন যায়গা নির্বাচন করুণ।

২। জমি উর্বর না থাকলে প্রতি বর্গমিটার জমিতে ১.০-১.৫ কেজি হারে জৈব সার/শুকনো গবর সুন্দর করে মিশিয়ে দিতে হবে।এরপর জমিতে ২-৩টি চাষ দিয়ে তারপর মই দিয়ে সমান করতে হবে।

৩। এরপর  জমিতে বেড তৈরি করতে হবে।বেডের পরিমাণ দৈর্ঘ্য বরাবর হবে ১০মিটার ও চওড়া  হবে ১ মিটার।এবং দুই বেডের মাঝে ৪০-৫০ সেমি দূরত্বের  ড্রেন থাকতে হবে।এই ড্রেন অনেক উপকারী।অতিরিক্ত পানি যেমন বের করে দেয় তেমনি ড্রেন ব্যবহার করে সহজেই সার/ঔষধ দেয়া যায়।

৪। বেড তৈরির ৩/৪ ঘন্টা পর বীজ বোনা উচিত।  

আমন ধানের বীজতলা তৈরির জন্য, প্রথমে উঁচু এবং উর্বর জমি নির্বাচন করতে হবে, যেখানে বন্যার পানি আসার সম্ভাবনা কম। এরপর, জমিকে ভালোভাবে কুপিয়ে, ঢেলামুক্ত করে, ১০-১৫ সেন্টিমিটার উঁচু করে বীজতলা তৈরি করতে হবে। মাটি তৈরি করার সময়, মাটি, বালি এবং পচা গোবর সার বা কম্পোস্ট মেশানো যেতে পারে। বীজ বপনের আগে, বীজতলার মাটি ভালোভাবে ঝরঝরা করে নিতে হবে। বীজতলার আদর্শ মাপ সাধারণত ৩ মিটার লম্বা এবং ১ মিটার চওড়া হয়ে থাকে, তবে চারার প্রয়োজনের উপর নির্ভর করে এর দৈর্ঘ্য কমানো বা বাড়ানো যেতে পারে। 

আরও: আপদের লক্ষণ ও প্রতিকার ব্যবস্থাপনা


আমন/বোরো ধানের বীজতলা তৈরির নিয়ম

১. জমি নির্বাচন:

উঁচু এবং উর্বর জমি নির্বাচন করুন যেখানে বন্যার পানি আসার সম্ভাবনা কম। 

২. মাটি প্রস্তুত করা:

বীজতলার জন্য জমি ভালোভাবে কুপিয়ে ঝুরঝুরা ও ঢেলামুক্ত করতে হবে। মাটি, বালি এবং পচা গোবর সার বা কম্পোস্ট মেশাতে হবে। জমি উর্বর না হলে, প্রতি বর্গমিটার জমিতে ১.০-১.৫ কেজি জৈব সার বা শুকনো গোবর মিশিয়ে দিতে হবে। 

৩. বীজতলা তৈরি:

বীজতলা ১০-১৫ সেন্টিমিটার উঁচু করে তৈরি করতে হবে, বীজতলার আদর্শ মাপ সাধারণত ৩ মিটার লম্বা এবং ১ মিটার চওড়া হয়ে থাকে, তবে চারার প্রয়োজনের উপর নির্ভর করে এর দৈর্ঘ্য কমানো বা বাড়ানো যেতে পারে। 

৪. বীজ বপন:

বীজ বপনের আগে, বীজ শোধন করে নিতে হবে। বীজ বপনের জন্য শুকনো, কাদাময়, ভাসমান বা ডাপোগ বীজতলা পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে। 

৫. বীজতলার যত্ন: 

চারা গজানোর ২ সপ্তাহ পর, প্রতি শতাংশে ২৫০ গ্রাম ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে  প্রয়োজনে, রোগ দমনের জন্য টিল্ট বা স্কোর স্প্রে করতে হবে। 

এইভাবে আমন ধানের একটি আদর্শ বীজতলা তৈরি করা যেতে পারে।

 

আরও: আখ ফসলের জাত ও বৈশিষ্ঠ্য

ভাল বীজ চেনার উপায়

ভালো বীজ চেনার জন্য কিছু উপায় রয়েছে। প্রথমে, বীজের আকার, আকৃতি, এবং রং স্বাভাবিক ও একই রকম হওয়া উচিত। এছাড়াও, বীজ পরিষ্কার, রোগমুক্ত এবং সতেজ হওয়া প্রয়োজন। বীজের সাথে অন্য ফসলের বীজ বা আগাছার বীজ মেশানো থাকা উচিত নয়। 

ভালো বীজ চেনার কিছু উপায় নিচে দেওয়া হল:

  • ভালো বীজের আকার ও আকৃতি একই রকম হবে এবং কোনো অস্বাভাবিকতা থাকবে না। 
  • বীজের রং স্বাভাবিক এবং উজ্জ্বল হবে। 
  • বীজ পরিপক্ক ও পুষ্ট হওয়া উচিত। 
  • বীজের সাথে অন্য ফসলের বীজ বা আগাছার বীজ মেশানো থাকা উচিত নয়। 

  • বীজ সতেজ এবং রোগমুক্ত হওয়া উচিত। 
  • বীজে অতিরিক্ত আর্দ্রতা থাকা উচিত নয়। 
  • ভালো মানের বীজের অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা বেশি থাকে, অর্থাৎ, বীজ বপনের পর দ্রুত চারা গজায়। 


বীজ কেনার সময় প্যাকেজিং দেখে নিন। প্যাকেটের গায়ে বীজের নাম, জাত, উৎপাদনকারীর নাম, অঙ্কুরোদগম হার, ইত্যাদি তথ্য উল্লেখ থাকতে হবে। 

একটি পাত্রে জল নিয়ে তাতে বীজ ছেড়ে দিন। ভালো বীজগুলি ডুবে যাবে এবং খারাপ বীজগুলি ভেসে উঠবে। 

উপরের বিষয়গুলো বিবেচনা করে ভালো বীজ নির্বাচন করা যেতে পারে।

আরও: ফসল চাষ


বপনের আগে বীজ শোধন

বীজ শোধন হল রোপণের আগে বীজে রাসায়নিক বা জৈবিক পদার্থ প্রয়োগ করা যা তাদের সবচেয়ে দুর্বল প্রারম্ভিক বৃদ্ধির পর্যায়ে রক্ষা করে। এই প্রক্রিয়া একাধিক উদ্দেশ্য সাধন করে: রোগ, কীটপতঙ্গ এবং পরিবেশগত চাপ থেকে রক্ষা করার পাশাপাশি শক্তিশালী অঙ্কুরোদ্গম এবং চারা বিকাশকে উৎসাহিত করে।

বীজ ড্রেসিং 

এটি বীজ শোধনের সবচেয়ে সাধারণ পদ্ধতি। বীজ শুষ্ক ফর্মুলেশন দিয়ে অথবা ভেজা ফর্মুলেশন দিয়ে স্লারি বা তরল ফর্মুলেশন দিয়ে শোধন করা হয়।

বীজ শোধন 

বীজ শোধন হচ্ছে বীজের বাইরে অথবা বীজের মধ্যে অতি ক্ষুদ্র জীবকনার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য জৈবিক ও রাসায়নিক প্রক্রিয়া। বীজ শোধন করা হলে অতি ক্ষুদ্র জীবানুর হাত থেকে বীজ ও চারা গাছকে রক্ষা করে। বীজ শোধন করে ফসল লাগানোর ফলে গাছের সার্বিক বৃদ্ধি অব্যাহত থাকে, ফসলের উৎপাদন বাড়ে।

অন্যভাবে, বীজ শোধন বলতে বোঝায়, রোপণের পূর্বে বীজকে রোগ, পোকা এবং পরিবেশগত চাপ থেকে রক্ষা করার জন্য বিভিন্ন রাসায়নিক বা জৈবিক পদার্থ দিয়ে প্রক্রিয়াকরণ করা। এর মাধ্যমে বীজের অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা বাড়ে এবং ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। 

আরও: ধানের জাত পরিচিতি ও নলেজ ব্যাংক

বীজ শোধনের গুরুত্ব

বীজ শোধন করে রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণু ধ্বংস করা যায়, যা পরবর্তীতে রোগাক্রান্ত হওয়া থেকে ফসলকে রক্ষা করে। 

বীজ শোধন করলে বীজের সুপ্তাবস্থা ভাঙ্গে এবং অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা বাড়ে, ফলে ভালো চারাগাছ পাওয়া যায়। 

বীজ শোধনের মাধ্যমে ফসলের প্রাথমিক অবস্থায় পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষা করা যায়। 

বীজ শোধন করে বীজকে শুষ্কতা, অতিরিক্ত তাপমাত্রার মতো পরিবেশগত চাপ থেকে রক্ষা করা যায়। 

রোগমুক্ত এবং সুস্থ বীজ থেকে উৎপাদিত ফসল অধিক ফলনশীল হয়। 

আরও: বালাইনাশক সেবা


বীজ শোধন পদ্ধতি

বিভিন্ন পদ্ধতিতে বীজ শোধন করা যায়। নিম্নে বীজ শোধনের বিভিন্ন পদ্ধতি বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

রাসায়নিক শোধন:

কার্বেন্ডাজিম, থিরাম ইত্যাদি ছত্রাকনাশক ব্যবহার করে বীজ শোধন করা যায়। 

জৈবিক শোধন:

ট্রাইকোডার্মা নামক উপকারী ছত্রাক ব্যবহার করে বীজ শোধন করা যায়, যা ক্ষতিকর ছত্রাক ধ্বংস করে। 

গরম পানি দিয়ে শোধন:

৫২-৫৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার গরম পানিতে ১৫ মিনিটের জন্য বীজ ডুবিয়ে রাখলে শোধন করা যায়। 

লবণ পানি দিয়ে শোধন:

একটি নির্দিষ্ট ঘনত্বের লবণ দ্রবণে বীজ ডুবিয়ে রাখলে স্বাস্থ্যকর বীজ নিচে থাকে এবং রোগাক্রান্ত বা দুর্বল বীজ উপরে ভেসে ওঠে। 

বীজ শোধন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া, যা ভালো ফলন পেতে এবং ফসলের রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ কমাতে সাহায্য করে। 

আরও: ধানে আক্রমনকারী ক্ষতিকর পোকার লক্ষণ, সাবধানতা, ব্যবস্থাপনা ও করনীয় বিষয়


বীজ শোধন সংক্রান্ত আরও বিস্তারিত তথ্য


১। বীজকে ৫২-৫৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস(হাতে সহনীয়) তাপমাত্রায় ১৫ মিনিট ডুবিয়ে রাখলে বীজ শোধন হয়ে যায়।

২। কারবেনডাজিম জাতীয় ছত্রাকনাশক দিয়েও বীজ শোধন করা যায়। ৩ গ্রাম ছত্রাকনাশক ১লিটার পানিতে মিশিয়ে সেখানে ১কেজি ধান দিয়ে কিছুক্ষন নাড়াচাড়া করে কয়েকঘন্টা রেখে দিলেই বীজ শোধন হয়ে যাবে।

বীজ শোধনের মাধ্যমে চাইলে বীজ থেকে রোগবালাই দূর করে নেয়া যেতে পারে। রোগমুক্ত বীজ দেয় অধিক ফলনের নিশ্চয়তা। তাই বীজবাহিত রোগ মুক্ত করার জন্য বীজ শোধন করা খুবই জরুরী।

আরও: ঢেঁড়শের বিভিন্ন রোগের লক্ষণ, ব্যবস্থাপনা, সাবধানতা ও করণীয় প্রতিকার ব্যবস্থা 

বীজ শোধনের জন্য বিভিন্ন ছত্রাকনাশক এবং রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করা হয়। কিছু জনপ্রিয় ঔষধের নাম হলো 

১। কার্বেনডাজিম,

২।পাইরোকুইলন,

৩। ট্রাইসাইক্লোজল,

৪। ভিটাভেক্স-২০০,

৫। প্রোভেক্স-২০০ এবং 

৬। এসিফ্লো ৪০ এস এফ। 

আরও কিছু রাসায়নিক দ্রব্য যা বীজ শোধনে ব্যবহৃত হয়। যেমন- 

১। থাইরাম, 

২। ক্যাপটান, 

৩। ম্যানকোজেব, 

৪। এমকোজিম, 

৪। বরিক এসিড, 

৬। ব্যাভিস্টিন (কার্বেন্ডাজিম)।

আরও: তিলের বিভিন্ন রোগের লক্ষণ, ব্যবস্থাপনা, সাবধানতা ও করণীয় প্রতিকার ব্যবস্থা

আলু বীজ শোধন পদ্ধতি

বীজ শোধন করার জন্য, সাধারণত ১ কেজি বীজের জন্য ২ গ্রাম কার্বেন্ডাজিম বা পাইরোকুইলন বা ট্রাইসাইক্লোজল ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে দ্রবণ তৈরি করে বীজ ১০ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে, এরপর অতিরিক্ত পানি ঝরিয়ে নিতে হবে। অথবা, ২ গ্রাম ব্যাভিস্টিন পাউডার (কার্বেন্ডাজিম) পরিমাণ মত ছাইয়ের সাথে মিশিয়ে আলু বীজ শোধন করা যায়। 

এছাড়া, ১ লিটার পানিতে ৩০ গ্রাম বরিক এসিড মিশিয়ে ১৫-২০ মিনিটের জন্য বীজ ডুবিয়ে রেখে পরে ছায়ায় শুকাতে পারেন। 

বীজ শোধনের জন্য যে কোন কৃষক বাজার থেকে বীজ শোধক প্রোভেক্স , ভিটাভেক্স, ভিটাফো-২০০ এফ এফ, হাদাক ইত্যাদি পাউডার কিনে প্রতি ১০ কেজি আলু বীজের জন্য ২৫ থেকে ৩০ গ্রাম পাউডার ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে আলু বীজ ৫ থেকে ১০ মিনিট পানিতে ডুবিয়ে রাখতে হবে।


পাট ও গম বীজ শোধন পদ্ধতি

বীজ শোধনের জন্য, বাজারে উপলব্ধ ছত্রাকনাশক যেমন ভিটাভেক্স-২০০ বা প্রোভেক্স-২০০ (০.৪%) ব্যবহার করা যেতে পারে। পাটের বীজ, গমের বীজ শোধনের জন্য, বপনের আগে বীজ ভালোভাবে রোদে শুকাতে পারেন। এই পদ্ধতিগুলি বীজকে রোগমুক্ত রাখতে এবং ভালো ফলন পেতে সহায়তা করে। 

আরও:  পানি কচুর আক্রমণকারী ক্ষতিকর পোকার লক্ষণ, ব্যবস্থাপনা, সাবধানতা ও করণীয় প্রতিকার ব্যবস্থা


ধান বীজ শোধন পদ্ধতি

ধানের বীজ শোধনের জন্য কার্বেন্ডাজিম, পাইরোকুইলন, ট্রাইসাইক্লোজল, বা ভিটাফ্লো (কার্বোক্সিন+থিরাম) জাতীয় ঔষধ ব্যবহার করা যেতে পারে। এই ঔষধগুলো ২-৩ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে বীজ শোধন করা যায়। এছাড়াও, বাজারে "এসিফ্লো" নামের একটি বীজ শোধনকারী ঔষধও পাওয়া যায়, যা বীজকে রোগমুক্ত করতে সাহায্য করে। 

ধানের বীজ শোধনের জন্য নিম্নলিখিত পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করা যেতে পারে: 

রাসায়নিক শোধন:

        কার্বেন্ডাজিম, পাইরোকুইলন, ট্রাইসাইক্লোজল, বা ভিটাফ্লো (কার্বোক্সিন+থিরাম) জাতীয় ঔষধ ২-৩ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে দ্রবণ তৈরি করুন। এরপর, এই দ্রবণে ধান বীজ ১০-১২ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখুন। ভেজানোর পর, বীজগুলো ভালোভাবে পানি ঝরিয়ে নিন এবং শুকিয়ে নিন। 

শুষ্ক শোধন:

        কিছু ক্ষেত্রে, বীজ শোধনের জন্য শুকনো পদ্ধতিও ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে, বীজ বাছাই করার পর রোদে ২-৩ ঘণ্টা গরম করে নিতে হবে। এরপর, কার্বেন্ডাজিম বা অন্যান্য উপযুক্ত ঔষধ বীজের সাথে মিশিয়ে একটি বদ্ধ পাত্রে কিছুক্ষন ঝাঁকালে ওষুধ বীজের গায়ে ভালভাবে লেগে যায়। 

অন্যান্য পদ্ধতি:

        কিছু জৈব পদ্ধতিও রয়েছে, যেমন - পঞ্চগব্যে (৩৫ মিলি প্রতি লিটার জলে) ৩০ ঘন্টা ধানের বীজ ভিজিয়ে রাখা বা বায়োগ্যাস স্লারিতে ১২ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখা। 

এছাড়াও, কিছু বিষয় মনে রাখতে হবে: 

  • বীজ শোধনের আগে বীজ ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে।
  • বীজ শোধনের জন্য সঠিক মাত্রায় ঔষধ ব্যবহার করতে হবে।
  • বীজ শোধনের পর, বীজগুলো ভালোভাবে শুকিয়ে নিতে হবে।
  • বীজ শোধনের জন্য স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে। 

এই পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করে, আপনি আপনার ধানের বীজকে রোগমুক্ত করতে পারেন এবং ভালো ফলন পেতে পারেন। 


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)